সাহিত্য ডেস্কঃ
বাংলাদেশে দীর্ঘ স্বৈরশাসনের কারনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রশিবির আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স করে আসছে এবং করতে অনেকটা বাধ্য হয়েছে। ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক ব্যানেরে তারা বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রশিবির ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সহ হল পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটিতে অনুপ্রবেশ করেছিল কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এর পর বর্তমানে ছাত্রশিবির তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ও পদবী সহ প্রকাশ্য নিয়ে এসেছে। এরফলে ছাত্রদল সহ কিছু মহল প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রশিবির যদি ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে থাকে তাহলে ছাত্রলীগের সকল অপকর্মের দায়ও ছাত্রশিবিরকেই নিতে হবে।
এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্রশিবির বৈষম্যবিরোধী সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে থেকে আন্দোলন করেছে এটা জাতীর কাছে সুস্পষ্ট। কোন ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে আন্দোলন করেনি বরং বিভিন্নভাবে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের উপর নি*র্যাতন করেছে। অভিযোগ ও প্রমাণ এক জিনিস নয়। ছাত্রশিবির এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ছাত্রশিবির ছাত্রলীগের পদ বহন করেছে।কিন্তু এবিষয়ে শিবির ঢাবি শাখার সেক্রেটারির বক্তব্য সুস্পষ্ট।তিনি বলেছেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে তার ছবি ছিল এটা সত্য তবে তিনি ছাত্রলীগের কোন পর্যায়ের পদ বহন করেননি।তাই শুধুমাত্র কারো সঙ্গে ছবি দিয়ে কেউ ছাত্রলীগের পদ বহন করেছে বিষয়টি প্রমান করাটা হাস্যকর।এবিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, শিবির যদি ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেও থাকে এটার দায় বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকারের। তারা দেশটাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে ক্যাম্পাসে কোন বিরোধী মতকে তারা সহ্য করতোনা। এমনকি বিরোধী মতের কর্মী এমনটা সন্দেহ হলেও তার উপর নেমে আসত ভয়াবহ নির্যাতন। যার প্রমাণ বুয়েটের আবরার ফাহাদ ও জগন্নাথ ক্যাম্পাসের বিশ্বজিৎ এর হ*ত্যা।এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া কিংবা ছাত্রদের কল্যানে কোন ভূমিকা রাখার জন্য আসলেই আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স করা ছাড়া কোন বিকল্প অপশন ছিলনা এটা এদেশের সকল মানুষের কাছে ক্লিয়ার ছিল। দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরাচারী সরকারের আমলে ছাত্রশিবির সহ সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অনেকটা জিম্মি ছিল।কেউ কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই তাকে গুম,খু*ন ও জেলের পরিনতি ভোগ করতে হত। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম কন্টিনিউ করা ও সামাজিক কাজের জন্য হাইডে থেকেই কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হয়েছে যা অনেকটা পরিস্থিতির শিকার হয়েই করেছে। কিন্তু ছাত্রশিবির কখনো ছাত্রলীগের অপকর্মের সাথে জড়িত না হয়ে বরং ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদ দমনে সাধারণ ছাত্রদের কাতারে মিশে স্বৈরাচার হটাও আন্দোলনে কঠোর ভূমিকা পালন করেছে।এবং ৫ই আগষ্টের আগের সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের হ*ত্যা ও নীপিড়ন করে এবং কোটার দাবি মেনে নিয়ে যখন আন্দোলনকে অনেকটা দমন করে পেলেছে ঠিক তখন আন্দোলনকে জিইয়ে রাখতে ঢাবি শিবির ৯ দফা দাবি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে স্ক্রিপ্ট তুলে দেয়।যার ফলশ্রুতিতে আবারো জোরালো হতে থাকে আন্দোলন এবং একটা পর্যায়ে সেই আন্দোলন ০১ দফার রুপ নিয়ে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।
সুতরাং এথেকে প্রতীয়মান হয় যে,দায় নেয়ার প্রশ্ন যখন উঠে, তখন বলতেই হবে শিবির কোন গোষ্ঠীর অপকর্মের সাথে জড়িত নয়।সুতরাং তাদের অপকর্মের দায় নেয়ার প্রশ্নই আসেনা বরং ছাত্রশিবির ফ্যাসিস্ট হটাও আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় নতুনভাবে দেশ স্বাধীন হওয়ার ক্রেডিট নিতেই পারে।
মুহাম্মদ ইউনুস
রাজনৈতিক কর্মী