বরগুনা প্রতিনিধিঃ বরগুনার আমতলী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীর ৫টি শুন্য পদে দীর্ঘ নয় বছরেও নিয়োগ না দেওয়ার সুযোগে সর্বোচ্চ একশত বিশ দিনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া দুই কাজী মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে টানা নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রকাশ্যে কাজীর অফিসের সাইনবোর্ড লাগিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধ দুই কাজী।এদিকে সংবাদ সংগ্রহকালে ভুয়া কাজীর বিষয়টি জানাজানি হলে কাজী জয়নুল ও শাহ আলম গভীর রাতে সাইনবোর্ড খুলে অফিস তালাবদ্ধ করে দেয়।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯ এর বিধি ৬ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রার নিকাহ রেজিস্ট্রারের পদ শুন্য হওয়ার সর্বোচ্চ একশত বিশ দিনের মধ্যে উক্ত শুন্য পদে নতুন নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন এবং ঐ একশত বিশ দিনের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার পার্শ্ববর্তী কোন নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীকে উক্ত শুন্য পদে সর্বোচ্চ একশত বিশ দিনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করিতে পারিবেন।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, আমতলী পৌরসভার ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী ২০১৫ইং সালে অবসর গ্রহণ করেন এবং ১,২,৩,৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড গুলো তারও আগ থেকে শুন্য ছিল।পৌরসভার এই ৯টি ওয়ার্ডে ২০১৫ সালে দুইজন নিকাহ রেজিস্ট্রারকে একশত বিশ দিনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করলেও উক্ত কাজী দ্বয় জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর সাথে যোগসাজশে বিভিন্ন কৌশলে ৯ বছরের বেশী সময় ধরে অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এ বিষয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীর সংশ্লিষ্ট জনৈক ব্যক্তি বলেন,আমতলী পৌরসভায় বছরে সাতশত বিয়ে হলে এবং প্রতিটি বিয়েতে তিন হাজার টাকা ফি গ্রহণ করলে প্রতি বছরে ২১ (একুশ) লক্ষ টাকা আয় আসে। সে হিসাবে নয় বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা আয় করেছে দুই কাজী।এছাড়াও তালাক রেজিস্ট্রিকরণ ও নকল এর ফি রয়েছে।
এ ছাড়াও আমতলী সদর ইউনিয়ন ও পৌর সভার একশত বিশ দিনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়া নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে এবং কাউকে দায়িত্বে না রেখে ২০২০ইং সালের জানুয়ারি মাসে সৌদিতে গিয়েছিলেন।প্রশ্ন উঠেছে তার সৌদিতে থাকা কালীন সময়ে আমতলী সদর ইউনিয়ন ও পৌর সভায় নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীর দায়িত্ব কে এবং কিভাবে পালন করেছে?
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর সভার বর্তমান কাজী মোঃ জয়নুল আবেদীন বলেন,আমি যে টাকা পাই তার ৫০% (পঞ্চাশ ভাগ) উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রার,আইজিআর সহ বিভিন্ন অফিসে দিতে হয়। কাউকে অতিরিক্ত দায়িত্ব না দিয়ে এবং কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সৌদিতে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিরুত্তর থাকেন।এ ছাড়াও কাজী জয়নুল আবেদীনের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম পাশের সনদ জ্বাল বলে অভিযোগ রয়েছে। সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার নুরুল আবসার বলেন,আমি অত্র অফিসে যোগদানের পর আমতলী পৌরসভায় নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীর পাঁচটি শুন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছি। অচিরেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।নয় বছর ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী দুই নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার এর এখতিয়ারাধিন।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ সিরাজুল করিম বলেন,নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী নিয়োগের বিষয়টি উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের।বিষয়টি বিলম্বিত হওয়ায় উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারকে পত্র দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বলা হয়েছে। দীর্ঘ নয় বছর ধরে দুইজন নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে বলেন,বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ একশত বিশ দিনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।এই সময়ের পর উক্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার কোন বিধান নেই। এখনো পৌরসভায় নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী’র অতিরিক্ত দায়িত্ব কিভাবে পালন করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,তদন্ত করে উক্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাজী জয়নুল আবেদীন এর সৌদিতে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,তিনি সৌদিতে যাওয়ার জন্য অফিসের কোন অনুমতি নেননি তবে এটি সহ সকল বিষয়ের তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী নিয়োগ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন,আমি বিষয়টি জেনে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলেছি তারা আমাকে বলছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরেও নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজীর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।