ভেষজ উদ্ভিদ একবর্ষী সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনে মহা খুশি আমতলীর কৃষকরা।তেলের চাহিদা মেটাতে সুর্য্যমুখীর চাষ করছেন কৃষকরা।সুর্য্যমুখী চাষ করে চাষীরা নিজেদের তেলের চাহিদা মিটিয়ে লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনা দেখছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে,এ বছর আমতলী উপজেলায় সূর্যমূখীর লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫’শ ১০ হেক্টর। ওই লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে। জলবায়ূ পরিবর্তন মোকাবেলায় খরা প্রবন ও লবনাক্ত এলাকায় টেকসই ফসল ব্যবস্থা উদ্ভাবনে আধুনিক জাতের তৈল বীজ উৎপাদনের উপর কৃষি, জলবায়ু ট্রাস্ট ও পরিবেশে মন্ত্রনালয় বৈপ্লবিক সফলতা পেতে একযোগে কাজ করেছে।
সুর্য্যমুখী হাইসান-৩৩ চাষে সেই সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। সুর্য্যমুখী ফুল দেখতে অনেকটা সুর্য্যের মতো এবং সূর্যের দিকে তাক করে থাকে বলে এর নামকরন করা হয়েছে সুর্য্যমূখী। এ উদ্ভিদের আয়ূকাল ৯০ থেকে ১০০ দিন।তুলনামূলক অল্প দিনের মধ্যে ফলন আসে। সূর্য্যমূখী ফুলে বীজ হয়। ওই বীজ থেকে পুষ্টিকর তৈল এবং ভুসি হাঁস মুরগী ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নির্ভেজাল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সূর্য্যমুখী তেল ঘি’র বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই তেল বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। কৃষকরা পরিবারের তেলের চাহিদা মিটিয়ে তেল ও বীজ বিক্রি করছে। এক মণ বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে ১৮ থেকে ২০ লিটার তৈল পাচ্ছেন কৃষকরা।
তেলের উৎস হিসেবে আমতলীতে সুর্য্যমূখীর ব্যপক চাষ হয়েছে। আমতলী উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে চোখ যত দুরে যাচ্ছে ততই ক্ষেতের পর ক্ষেত ফুলের সমাহারে ভরপুর। পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে সূর্য্যমূখী চাষ হয় এবং চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফলন কাটা শুরু করে। বর্তমানে চাষিরা ফুল কাটতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনাবৃষ্টির কারনে এ বছর সূর্য্যমুখী চাষে কৃষকদের খরচ বেশী হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূর্য্যমূখী চাষে কৃষকদের উৎসাহী করতে সুর্য্যমুখী হাইসান-৩৩ বীজের ১’শ ২৫ টি প্রদর্শনী করেছে। ওই প্রদর্শনী করা কৃষকদের কৃষি অফিস নগদ এক হাজার টাকা ভতুর্কি, ভালো মানের বীজ ও সার সরবরাহ করেছে বলে জানান কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম।
উপজেলার হলদিয়া, চাওড়া, আঠারোগাছিয়া, আমতলী সদর ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে ব্যপক সূর্য্যমুখীর চাষ করেছে কৃষকরা।মঙ্গলবার বিকেলে আমতলী উপজেলার আমতলী সদর,আড়পাংগাশিয়া,হলদিয়া, চাওড়া,গুলিশাখালী ও আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখাগেছে,স্বাভাবিকের চেয়ে একটু সমতল ও উচু জমিতে সূর্য্যমুখী ফুলের বাহারী সমাহার। কৃষকরা ফল কাটতে প্রস্তুতি নিয়েছেন।আড়পাংগাশিয়া ইউনিয়নের জুগিয়া গ্রামের কাওসার তালুকদার বলেন,২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এক’শ ৩৫ শতাংশ জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছি। বৃষ্টি কম হওয়ায় এ বছর খরচ বেশী হলেও এবছর ফলন ভালো হয়েছে আশা করি ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। তিনি আরও বলেন, পরিবারের তেলের চাহিদা মেটাতে সুর্য্যমুখী চাষ করেছি।
চাওড়া ইউনিয়নের বেতমোর গ্রামের কৃষক আবু বকর,রফেজ উদ্দিন,সোহরাব ও সিরাজ মিয়া বলেন,এ বছর সুর্যমুখীর ফলন বেশ ভালো। পরিবারের তেলের চাহিদা পুরন করে তেল বিক্রি করার আশা করছি।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন,পরিবর্তিত জলবায়ূ মোকাবেলায় সুর্য্যমুখী চাষে কৃষকদের উৎসাহী করে ১’শ ২৫ টি প্রদর্শনী করা হয়েছে। ওই সকল প্রদর্শনীর কৃষকদের নগদ অর্থ, হাইসান-৩৩ বীজ ও সার বিতরন করা হয়। তিনি আরও বলেন,এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় পরেও ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা পরিবারের তেলে চাহিদা পুরন করে বেশ লাভবান হবে।