মাকাবারায়ে জামিয়া নামক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন হাটহাজারী মাদরাসার শীর্ষ আলেমগণ। সেখানে হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির, হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও হেফাজতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমীর, শিক্ষা পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর পাশেই চির নিদ্রায় শায়িত হলেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মাওলানা আব্দুস ছালাম চাটগাঁমী।
হাটহাজারী দারুল উলুম মাঈনুল ইসলাম বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালক নির্ধারণে বৈঠকরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন মাদরাসার পরিচালনা কমিটির প্যানেল সদস্য মাওলানা আব্দুস ছালাম চাটগাঁমী (৮৫)। মহাপরিচালক হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরপরই তিনি আচমকা হার্টষ্টোক করেন। তিনি হুইল চেয়ারে বসা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বলে জানান মাদরাসা পরিচালনা কমিটির অপর প্যানেল সদস্য আল্লামা শেখ আহমদ।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা ৪০মিনিটের সময় তাঁর মৃত্যুর পর দিবাগত রাত ১১টায় হাটহাজারী মাদরাসা মাঠে মৃত আব্দুস ছালাম চাটগাঁমির নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এবং মাদরাসার ‘মাকাবারায়ে জামিয়া’ নামক কবরস্থানে আল্লামা আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি।
মৃত্যুকালে সাত ছেলে ও চার কন্যা, আত্মীয় স্বজন, শিক্ষক-শিক্ষাথীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান তিনি।
মৃত আব্দুস ছালাম দীর্ঘদিন মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর তিনি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির প্যানেল মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তিনি বাংলাদেশের মুফতি আজম (গ্রান্ড মুফতি), পাকিস্তানের জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া বানূরী টাউন করাচির সাবেক প্রধান মুফতি, কওমি অঙ্গনের বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মুফতি ও মুহাদ্দিস ছিলেন।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার নলদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গ্রামের মাদরাসায় প্রাথমিক পড়াশুনা শেষে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বাবুনগর মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের জিরি মাদরাসায় চার বছর পড়াশুনা শেষে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের উচ্চ শিক্ষার জন্য পাকিস্তানের বিখ্যাত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া আল্লামা বানূরী টাউন করাচিতে ভর্তি হন। সেখানে উচ্চতর হাদীস ও ফেকাহ নিয়ে পড়াশুনা করেন। ফিকাহ পড়াকালিন প্রচলিত ব্যবসায় স্বত্ব বিক্রি ও একটি তাত্ত্বিক আলোচনা শিরোনামে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ তৈরি করেন। আল্লামা আব্দুর রশীদ নোমানী রহ. অভিসন্দর্ভটি পূর্ণ যাচাই-বাচাইয়ের পর মুমতাজ (ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট) সনদ প্রদান করেন। এ ছাড়াও মুফতি ওলি হাসান টুংকি রহ. নিজের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ সনদ প্রদান করেন।
পড়াশুনা শেষেই ঐ জামেয়াতেই কার্যকরী মুফতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। মুফতি আযম ওলি হাসান টুংকির অসুস্থার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান মুফতির কাজ আঞ্জাম দেন। তিনি মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে নিজ অবস্থান ধরে রাখেন। মুফতি ওলি হাসান টুংকির ইন্তেকালের পর বিশ্ববিখ্যাত এ জামেয়ার প্রধান মুফতি হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।
আব্দুস সালাম চাটগামী পাকিস্তানের বানূরী টাউন করাচিতে দীর্ঘ ৩০বছর অবস্থানকালে প্রায় ৩লক্ষ লিখিত ফতোয়া দিয়েছেন। যা জামেয়া বানূরী টাউন করাচির ইতিহাসে অনন্য মাইলফলক। বানূরী টাউনের দারুল ইফতায় ৬০ খণ্ড সম্বলিত রেজিস্ট্রি বইতে এসব সংরক্ষিত আছে। ফলে দেশের মাটি পেরিয়ে বিদেশেও মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী নামটি সমুজ্জ্বল।
তিনি ফতোয়া গ্রন্থের জগতে সাড়া জাগানো নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘জাওয়াহিরুল ফাতওয়া’। আলোড়ন সৃষ্টিকারি এ গ্রন্থের মাকবুলিয়্যাত স্বয়ং রাসূল সা. এর মাধ্যমে স্বীকৃত। স্বপ্নের মাধ্যমে রাসূলে আরাবী সা. গ্রন্থটির প্রশংসা করেছেন! ‘জাওয়াহিরুল ফাতওয়া’র নতুন এডিশনে এ স্বপ্নের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
৪খণ্ডের জাওয়াহিরুল ফাতওয়া ছাড়াও পাকিস্তানের করাচির শীর্ষ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশী এ মহান লেখকের একাধিক গ্রন্থ ছাপানো হয়েছ।
তাঁর লেখা রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে,
. জাওয়াহিরুল ফাতওয়া ৪খণ্ডে প্রকাশিত। ৫ম ও ৬ষ্ঠ খণ্ড প্রকাশিতব্য! (উর্দু)
. আপকা সুওয়াল আওর উনকা জওয়াব আহাদীছ কি রৌশনি মেঁ (উর্দু)
. ইসলামী মায়িশাত কে বুনয়াদী উসূল (উর্দু)
ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানব অঙ্গের ক্রয়-বিক্রয়।(বাংলায় অনূদিত)
. রহমতে আলম সা. এর মকবুল দোয়া (উর্দু-বাংলা) এসব গ্রন্থ ছাড়াও তিনি বহু গ্রন্থ লিখেছেন
আব্দুস ছালাম চাটগাঁমি ২০০০সালে স্বদেশের ভালবাসা এবং দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেবের আহবানে মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী বাংলাদেশের ফিরে আসেন। ২০০১ সালে দারুল উলূম হাটহাজারীতে খেদমত শুরু করেন। মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী দারুল উলূম হাটহাজারীতে নিয়োগের পর ২ বছর মেয়াদি উচ্চতর উলূমুল হাদীছ বিভাগ চালু করা হয়। বিভাগটি ইতোমধ্যে হাদীস গবেষণায় নতুন নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।
যেভাবে বাংলাদেশের গ্র্যান্ড মুফতি ?
দেশে ফিরে হাটহাজারীতে নিয়োগের সময় বাংলাদেশের গ্রান্ড মুফতি ছিলেন আল্লামা আহমদুল হক রহ.। তার ইন্তেকালের পর আল্লামা চাটগামীকে বাংলাদেশের ‘মুফতি আযম’ হিসেবে মনোনীত করা হয়। ‘বড় মনের’ মানুষ হিসেবে পরিচিত এ মহান মনীষী বিরতহীন ইসলামের খেদমত করে গেছেন দুনিয়াবিমুখ আল্লামা চাটগামী রহ.।
আল্লামা চাটগামীর রয়েছে নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান। ২০০১ সালে চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই-এ প্রতিষ্ঠা করেছেন, দারুল ইফতা খাদেমুল কুরআস ওয়াস সুন্নাহ নামে ব্যতিক্রমধর্মি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ, উচ্চতর কেরাত ও হেফজ বিভাগ রয়েছে।
দেশ-বিদেশে পরিচিত বাংলাদেশের মুফতি আযম বর্তমানে বার্ধক্যজনিত কারণে নানা রোগে ভুগছিলেন। তবু দীর্ঘদিন ধরে ইলমে ফিকাহর খেদমত, দারুল উলূম হাটহাজারীর ইফতার বিভাগের ছাত্রদের তামরীন দেখতেন, শুনতেন ও দস্তখত করতেন।
উল্লেখ্য, মাওলানা আব্দুস ছালাম চাটগাঁমীকে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ হারুনুর রশিদ
বার্তা সম্পাদক : জাকির হোসেন শাকিল
আইন উপদেষ্টা : এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন
"এইচ বাংলা মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত -দেশ যুগান্তর"
অফিস : পুরানা পল্টন, ঢাকা- ১০০০।
ই-মেইল : news.deshjugantor@gmail.com
যোগাযোগ : 01763592492
Copyright © 2024 দেশ যুগান্তর. All rights reserved.