জামালপুরের মেলান্দহে পটুয়াখালী নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহল। উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বেলতৈল বাজারের পাশে পটুয়াখালী থেকে দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে আবাদি জমি, বসত-বাড়ি, বিএডিসি’র সেচ পাম্পসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সেতু হুমকির মুখে পড়েছে । এ নিয়ে বার বার প্রশাসনের দরজায় কড়া নাড়লেও বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে খাঁয়েরপাড়া গ্রামের মোঃ শহীদ মিয়া। ৬ মাস আগে পটুয়াখালী নদীতে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তিনটি ড্রেজার মেশিন পুড়িয়ে দেয় এবং ড্রেজার মালিককে জরিমানা করে। অভিযানের তিন দিন পর আবার ও নদী থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে ড্রেজার মালিক শহীদ মিয়া।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, কাটাখালী নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে বসতবাড়িতে। ফলে কয়েক একর ফসলি জমি ভাঙতে শুরু করেছে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নিকটস্থ জনবসতিপূর্ণ এলাকা ভাঙনের কবলে পড়তে পারে। এ ছাড়াও মাত্র কয়েক মিটার অদূরে বিএডিসি’র সেচ পাম্পসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সেতু হুমকির মুখে রয়েছে। সচেতন মহল দ্রুত এর প্রতিকার চেয়েছেন।
এবিষয়ে ড্রেজার মালিক শহিদ মিয়া বলেন, এই পটুয়াখালী নদীতে আরো ড্রেজার মেশিন রয়েছে। সবাই যদি বালু তোলা বাদ দেয় তাহলে আমিও নদী থেকে বালু তোলা বন্ধ করব।
আমির্ত্তী গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, নদীর দুই পাশেই ফসিল জমি আছে। গত বছর কয়েক বিঘা জমি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে আশেপাশে আরো ফসলের জমি ব্যাপক নষ্ট হবে। নদীর তীরে রয়েছে সরকারি সেচ পাম্প এখন যদি নদীতে ড্রেজার বন্ধ করা না হয় তাহলে সেচ পাম্পসহ ভেঙে নদীতে চলে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্যসহ এলাকার সচেতন মহলের একাধিক লোক বলেন, এক বছর ধরে নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে শহীদ মিয়া। সবাইকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে আসছে। তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলেও তাদের কিছুই হয় না। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের খবর আগেই জানতে পারেন। অভিযানের দুই-একদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও ফের বালু উত্তোলন শুরু হয়। তারা আরো বলেন, ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা বালু উত্তোলনের ব্যাপারে সবকিছুই জানা সত্যেও ড্রেজার মালিকদের কাউকে কিছু বলছেন না।
ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি এখনো শুনিনি নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করলে আশেপাশে ফসলের জমি নষ্ট হবে। এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। ড্রেজার মেশিন মালিককে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বলবো।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুল ইসলাম জানান, আমার কাছে এখনো কেউ ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ করেনি । এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিব। তবে ছয় মাস আগে কাটাখালী নদীতে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় তা ভাঙনের সৃষ্টি করে থাকে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হবে । স্থানীয় প্রশাসনই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন,অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন জব্দসহ নিয়মিত মামলাও করি। কাটাখালী নদীতে ড্রেজার মেশিন বন্ধ করতে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।