শেরপুরের পাঁচ উপজেলার গ্রামীণ মহিলাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বাল্যবিবাহ, ফতোয়া, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, আইনগত সমস্যা এবং ডিজিটাল নানা সেবা দিয়ে লখো নারীকে আলোর পথ দেখাচ্ছে ‘তথ্য আপা’। শুধু তাই না করানাকালীন সময় অসহায় মানুষের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কাজও করেন তথ্য আপা প্রকল্প কর্মরত কর্মীরা।
উপকারভোগীরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তারের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে সমাজ জন্ডার বৈষম্য দূর করার এটি সরকারের একটি অনন্য উদ্যোগ।
জাতীয় মহিলা সংস্থা শেরপুর জেলা শাখা কার্যালয়, তথ্য আপা প্রকল্প কার্যালয়সহ একাধিক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা নারী-পুরুষ সমতা’ ‘নারী-পুরুষ সমতায় তথ্য আপা পথ দেখায়’ এই শ্লোগানক সামনে রেখে ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পটি (২য় পর্যায়) শেরপুর সদর উপজেলাসহ নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নকলায় চলমান রয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাতীয় মহিলা সংস্থা।
প্রকল্পটি একযোগে ৮টি বিভাগর ৬৪ জেলার ৪৯০টি উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ওইসব উপজেলার প্রত্যকটিতে প্রকল্পের আওতায় একটি করে তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিটি তথ্যকেন্দ্র একজন তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও দুইজন তথ্যসেবা সহকারী তথ্য সেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত আছেন। এরাই প্রকল্পে এলাকায় ‘তথ্য আপা’ হিসেব পরিচিত। সরকার কর্তৃক গৃহীত রুপকল্প-২০২১, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) এবং এসডিজির লক্ষ্যমাত্রায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। দেশর গ্রামের অসহায়, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারীর তথ্য প্রবেশাধিকার এবং তাদেরকে তথ্য প্রযুক্তির সেবা প্রদানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্নিত করেছে। এ লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি গৃহীত হয়। প্রকল্পটি ১ম পর্যায় ১৩টি উপজেলায় সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ৪৯০টি উপজেলায় তৃণমূল নারীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য পাঁচ বছর মেয়াদী (এপ্রিল ২০১৭ থক মার্চ ২০২২ পর্যÍ) ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের মোট জনবল ১৯৭৮ জন। ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে ১৮ জন এবং ৪৯০টি তথ্যকেন্দ্র ১৯৬০ জন কর্মরত আছন। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৪ কোটি ৯০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
উপকারভোগী শেরপুর সদর উপজেলার জঙ্গলদী গ্রামের রৌশনারা, কুমরী কাটাজান গ্রামের পারভীন ও চাদরনগর গ্রামের মনোহার বলেন, তথ্যকেন্দ্র কর্মরত তথ্য আপা’রা উঠান বৈঠকে উপস্থিত গ্রামীণ মহিলাদের ইন্টারনেটের বাস্তব ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা প্রাপ্তির পদ্ধতি প্রদর্শন করেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সরকারি আইটি বিশষজ্ঞসহ বিভিন্ন বিষয়ে রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মুক্ত আলোচনা করেন।
নালিতাবাড়ীর গাজাকুড়া গ্রামের রিতা আক্তার, পূর্ব কাপাশিয়া গ্রামের সালমা বেগম ও গোল্লারপাড় গ্রামের ইরানী বেগম বলেন, প্রতিটি উঠান বৈঠকে ১০০ জন মহিলা অংশগ্রহণ করেন। মাসে প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে ২টি করে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামীণ মহিলাদর স্বাস্থ্যগত সমস্যা, বাল্যবিবাহ, ফতোয়া, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, আইনগত সমস্যা এবং বিদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ই-মেইলে তথ্য আদান প্রদান, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া সম্পর্কিত সেবা দিয়ে লাখো নারীকে আলার পথ দেখাচ্ছে ‘তথ্য আপা’রা।
তথ্য আপা কেন্দ্রের শেরপুর সদর উপজেলা শাখার কর্মকর্তা সেতু রানী সূত্রধর বলেন, তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা, ওজন পরিমাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা এসব প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। অত্যান্ত সহজ উপায় বলতে গেলে ওইসব সেবার পাশাপাশি নিখরচায় তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করে নারীর ভাগ্যবদলের দিকনির্দশনা রয়েছে “তথ্যআপা” উদ্যোগ। তিনি জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি নির্দেশনায় অফিস বন্ধ রয়েছে। পরবর্তীতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দিক নির্দেশনা মোতাবেক সেবা প্রদান আবারো শুরু হবে।
জাতীয় মহিলা সংস্থারর শেরপুর জেলা কর্মকর্তা আসলামউদ্দীন বলেন, মাইন্ড ইন্সপ্যায়ার টু ন্যাশনাল অ্যাচিভমেট এবং সলফ হেল্প গ্রুপের সদস্যদেরকে টক্সটুয়াল, অডিও, ভিডিওর মাধ্যমে ই-লার্নিং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে গ্রামীণ নারীদের আইটিইএস দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। ই-লার্নিং সিস্টেম লাইভ ক্লাস, লাইভ ব্রডকাস্ট বক্তৃতা, পূর্ব নির্ধারিত অনলাইন শ্রেণিকক্ষ, ২৪ ঘটা ই-লার্নিং চ্যানল, ভিডিও গ্যালারী, মোবাইল টিভি, লাইভ স্ট্রিমিং ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য যুক্ত থাকছে। মোট কথা তথ্য আপা প্রকল্প একটি ডিজিটাল প্রতিচ্ছবি।
জাতীয় মহিলা সংস্থার শরেপুর জেলা চেয়ারম্যান নাসরিন বেগম ফাতেমা বলেন, প্রতিটি তথ্য।
দেশ যুগান্তর/আরজে