বরগুনার তালতলীর শারিকখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ নলবুনিয়া গ্রামে জমির লোভে আপন খালাকে খুন করেছে মালেক (৩৮) নামের এক গ্রাম পুলিশ। খুনের মূল ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আপন মামাকে বাদী বানিয়ে গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধ প্রতিপক্ষকে আসামী বানিয়ে চাকুরী করে আসছিলো গ্রাম পুলিশ আঃ মালেক। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) সকালে কচুপাত্রা বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে বরগুনা গোয়েন্দা পুলিশ।
বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখার উপ পরিদর্শক ও ক্লুলেস হত্যা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন গত বছরের ৩ এপ্রিল রাত আটটার সময় নিহত সাফিয়া বেগম বিকাশে টাকা তোলার জন্য ঘর থেকে বের হয়। এরপরে তাকে ৬ এপ্রিল শারিকখালীর ধোপার ভিটার পূর্ব পাশে কালিরখালের কেওড়াগাছের নীচ থেকে তালতলী থানা পুলিশ।
এই ঘটনায় মালেক তার আপন মামা পটুয়াখালী জেলার ছোট বিঘাই গ্রামে বসবাসরত ইউনুস চৌকিদার ঐ দিনই তাদের সঙ্গে জমিজমা বিরোধ রয়েছে ৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার আসামীরা হলো ১. সোনা মিয়া ২. জাফর ৩. সিদ্দিক ও ফারুক ঘরামী।
সাফিয়া খাতুন হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে গত বছরের জুন মাসে মামলাটি তদন্ত করতে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা সংস্থার উপর ন্যাস্ত করা হয়। এব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, নিহত সাফিয়ার বিভিন্ন তথ্য জানতে গিয়ে তার ঘনিষ্ঠ ও নির্ভরশীল ব্যক্তি স্হানীয় ফকির করিম খাঁ নিখোঁজ ঘটনার পর থেকে। তাকে খুঁজে পেতে গোপনে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালানোর পর গতকাল শুক্রবার মংলা পৌরসভা থেকে গ্রেফতার করে।
করিম খাঁ কে গ্রেফতারের পর তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সকল ঘটনা স্বীকার করে বলে নিহত সাফিয়া বেগম তাকে খুব মান্য করতো। এই ঘটনার মূলহোতা আঃ মালেকের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। সে জমি দখল করতে ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়। বিকাশে টাকা তোলার পর বাড়ির সামনে আসলে তাকে পাশের সূর্যমুখী ক্ষেতের কাছে নিয়ে যাই। সেখানে নিয়ে গেলে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে আঃ মালেক ও তার সহায়তায় সাফিয়া বেগমকে হত্যা করে কালির খালে পুঁতে রাখা হয়। পরে আঃ মালেক নিহত সাফিয়ার কানে স্বর্ণের রিং বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা দেয় এবং পালিয়ে যাওয়ার জন্য আরো ৫ হাজার টাকা দেয়। বাকী ১৫ হাজার টাকা আর দেয় নাই। আমি যেন ভারতে পালিয়ে যাই, ভারতে পালিয়ে গেলে কেউ আর এই ঘটনা জানতে পারবেনা।
এব্যাপারে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বশির আলম বলেন, বিভিন্ন সোর্স ও ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে তালতলীর সাফিয়া ক্লুলেস হত্যাকান্ডের প্রকৃত অপরাধী করিম খাঁ কে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করার পর হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী গ্রাম পুলিশ আঃ মালেক পালিয়ে যাবার সময় আজ সকালে কচুপাত্রা বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। বরগুনা ডিবি পুলিশ বরগুনার আরো একটি ক্লুলেস হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেফতার কৃত আসামিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্হা করা হচ্ছে।
গত এক বছরের মধ্যে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখার উপ পরিদর্শক মোঃ মোশারফ হোসেন ৪টি ক্লুলেস আলোচিত হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। তালতলীর খালুর হাতে ভায়রার মেয়ে ধর্ষণের পর হত্যার রহস্য, বামনায় কচুক্ষেতে বৃদ্ধ সাফিয়া হত্যাকান্ড, বেতাগীতে আলেয়া নামক বাড়ি ওয়ালাকে সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার জন্য ভাড়াটিয়া মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক হত্যা কান্ড ও ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা ছিল উল্লেখযোগ্য।#
সাইফুল্লাহ নাসির,আমতলী (বরগুনা)