আদালতে বা থানায় কোন মামলা না থাকলেও শুধুমাত্র নামের মিলের কারণে আরিফ হোসেন (৩৬) নামে এক ব্যক্তি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হিসেবে গ্রেফতার হলেন তিনি। পুলিশের ভুলের কারণে মৃগি রোগী আরিফকে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হতে হলো। অথচ যেই মামলায় পুলিশ নিদোর্ষ আরিফকে গ্রেফতার করেছে সেই মামলার মূল আসামী আরিফ বর্তমানে ইটালি প্রবাসী। যাচাই বাছাই ছাড়াই একজন নির্দোষ ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করার বিষয়টি জানাজানি হলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার কর্মদক্ষতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহাপুর ও ইছাপুরা পাশাপাশি দুটি গ্রাম। জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে সাহাপুর গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম তার দেবর আমিন উল্ল্যার পুত্র আরিফ(২৪)সহ কয়েকজনকে আসামী করে আদালতে মামলা(নং-১২০৪/২০২২) দায়ের করে। ওই মামলায় অভিযুক্ত আরিফ এর নামে ফরিদগঞ্জ থানায় ওয়ারেন্ট আসে।
থানা পুলিশের এএসআই নুরুন্নবী ওয়ারেন্ট যাচাই বাছাই না করেই গত ২৩ নভেম্বর সকালে ওই ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের আমিন হকের ছেলে আরিফ হোসেন(৩৬)কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। এসময় আরিফের পরিবারের সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই এবং আরিফ অসুস্থ বললেও ওই পুলিশ কর্মকর্তা কর্ণপাত করেন নি।
পরে আরিফের পরিবার ওই দিনই চাঁদপুর আদালতের মাধ্যমে আরিফকে জামিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু বাড়িতে এসে জানতে পারেন, আরিফকে যেই মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই মামলার আসামী আরিফ নয়। পরে ২৬ নভেম্বর চাঁদপুর আদালত থেকে মামলার নথি উঠিয়ে তারা নিশ্চিত হন।
সরেজমিন গতকাল রোববার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামে গিয়ে কথা হয় ওই গ্রামের আমিন হকের সাথে। তিনি জানান, তাদের সাথে পাশ্ববর্তী আতর আলী (কালু খাঁ) স্ত্রী রোকেয়া বেগম জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করে। কয়েকমাস পূর্বের ঘটনা ইতিমধ্যেই শালিশী বৈঠক হয়, কোন মামলা রজু হয়নি। কিন্তু ২৩ নভেম্বর বৃহষ্পতিবার সকালে থানা পুলিশের এএসআই নুরুন্নবী এসে আমার ছেলে আরিফের নামে ওয়ারেন্ট আছে বলে রাস্তা থেকে টেনে হিচঁড়ে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এসময় মামলা নেই ও মৃগি রোগী বললেও পুলিশ কর্ণপাত করেন নি।
পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি পার্শবর্তী সাহাপুর গ্রামের কাশেম আলী স্ত্রী রোকেয়া বেগমের দায়েরকৃত মামলার আসামী হিসেবে আমার ছেলেকে আটক করা হয়েছে। অথচ ওই মামলার আসামী আরিফ বর্তমানে ইতালি প্রবাসী। আমি ধারদেনা করে ছেলেকে জামিনে মুক্ত করেছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলাটির বাদী সাহাপুর গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম জানান, পুলিশ যেই আরিফকে ধরেছে, আমার মামলার আসামী সেই আরিফ না। আমার দেবরপুত্র আরিফ বর্তমানে প্রবাসে রয়েছে।
প্রবাসী আরিফের ভাই মাসুদ হোসেন জানান, তার ভাই আরিফ বর্তমানে ইতালি রয়েছে। পুলিশ, যাচাই বাছাই ছাড়াই অসুস্থ হতদরিদ্র আরিফকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. এমরান হোসেন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার কাছে কেউ না আসাতে খোঁজ খবর নিতে পারিনি। পরবর্তিতে ঘটনাটি আমি শুনেছিলাম।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই নুরুন্নবী জানান, আমি ওয়ারেন্টের সাথে নাম ঠিকানা মিলে যাওয়ায় তাকে আটক করি। আদালত মনে করলে আমাকে তলব করবে।