বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রতবিচার আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ১৭ জনকে অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার সকালে দ্রতবিচার আদালতে বরগুনা প্রেসক্লাবের পক্ষে এ অভিযোগ (মামলা নং ১৮/২৪) দায়ের করেন সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার। অভিযোগ আমলে নিয়ে বরগুনা সদর থানাকে এজাহার হিসেবে গণ্য করে পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিয়তউল্লাহ বৃহস্পতিবার সকালে এ আদেশ দেন।
মামলার বিবরণীতে সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার উল্লেক করেন, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে বরগুনায় অপসাংবাদিকতার মাধ্যমে চাদাবাজিসহ নানা অপকার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলো। তাদের এসব অপকর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বরগুনা প্রেসক্লাবের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তারা বরগুনা প্রেসক্লাবে এ হামলা চালায়।
মামলার বিবরণীতে আরও জানা যায়,গত ১৯ ফেব্রæয়ারি বরগুনা প্রেসক্লাবের অধিকাংশ সদস্য যখন শিক্ষা সফর উপলক্ষে কোলকাতা প্রেসক্লাবের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করছিলেন তখন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা চালায়। এসময় তারা প্রেসক্লাব দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবে পৌঁছালে প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক, সাংবাদিক ও আইনজীবী সোহেল হাফিজসহ ঘটনাস্থলে ছুটে আসা একাধিক সদস্য ও সহযোগী সদস্যকে লাঞ্ছিত করে হামলাকারীরা। বরগুনা সদর উপজেলার ১০ নং নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের একজন ইউপি সদস্য ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী মাসুদ তালুকদার, বরগুনা প্রেসক্লাব থেকে বারবার বহিস্কৃত সদস্য মুশফিকুল ইসলাম আরিফ এবং হারুন অর রশীদ রিঙ্কুর নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, সগির হোসেন (৪০), শাজনুস শরীফ (২৫), আল আমিন (৩২), জাফরুল হাসান রুহান (৪০), রাকিবুল ইসলাম রাজন (২৮), মো. মিরাজ (৩৪), আনোয়ারুল ইসলাম (৫০), সানাউল্লাহ (৩০), জহিরুল ইসলাম (৩৮), জুয়েল মোল্লা (৩৬), রিমন (৩৮), জুলহাস (৪২), রিমন (৪০) এবং রাশেদ আহমেদ বশির (৪৯)।
এ বিষয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ ও দৈনিক জনকণ্ঠের বরগুনা প্রতিনিধি অ্যাড. গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, সারাদেশের প্রেক্ষাপটে যেসব প্রেসক্লাবগুলো স্বকীয় গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক রীতি নীতির চর্চা করে আসছে তাদের মধ্যে বরগুনা প্রেসক্লাব অন্যতম প্রধান। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বরগুনা প্রেসক্লাবের তিনতলা নিজস্ব ভবন রয়েছে। ভবনের দ্বিতীয় তলা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়তলায় বরগুনা প্রেসক্লাবের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। স্থানীয় উন্নয়নে সকল অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সূচণালগ্ন থেকে গুরুত্বপূর্ন ভ‚মিকা রেখে চলেছে বরগুনা প্রেসক্লাব। তিনি আরও বলেন, বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্যভুক্তির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান শর্ত আবেদনকারীকে ন্যুনতম স্নাতক বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।
অ্যাড. গোলাম মোস্তফা কাদের আরও বলেন, বরগুনা প্রেসক্লাব থেকে সাংগঠনিক শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে বহিস্কৃত দু’জন সদস্যকে সাথে নিয়ে বরখাস্তকৃত একজন সদস্য মুশফিকুল ইসলাম আরিফ এবং মাসুদ তালুকদার নামের একজন বিতর্কিত ইউপি সদস্য বরগুনা প্রেসক্লাবের সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এ হামলার ঘটনা ঘটায়। ঘটনার পরে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরাসরি লাইভ দিয়ে এবং বিচ্ছিন্নভাবে বরগুনা প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে সাধারণ জনগনের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মনোয়ার বলেন, ‘বরগুনা প্রেসক্লাবের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনই ঘটেনি। তিনি বলেন,পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে কোন পেশিশক্তির মাধ্যমে বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়া যায় না। যারা এ প্রচেষ্টা চালিয়েছে তারা অন্যায় করেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আনোয়ার হোসেন মনোয়ার আরও বলেন, বরগুনা প্রেসক্লাবের রয়েছে সুদীর্ঘ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কোন অপশক্তির কাছে বরগুনা প্রেসক্লাব মাথা নোয়াবে না।’
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও খেলাঘর কেন্দ্রিয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক চিত্ত রঞ্জন শীল বলেন, চর দখলের মত করে প্রেসক্লাব দখলের এ অপচেষ্টায় আমরা আহত, ব্যথিত। শিক্ষা সফর উপলক্ষে প্রেসক্লাবের অধিকাংশ সদস্য যখন ইন্ডিয়ায় অবস্থান করছিলো তখনই এই হামলার ঘটনা ঘটায় হামলাকারীরা। খবর পেয়ে প্রেসক্লাব রক্ষায় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বরগুনা প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাড. সোহেল হাফিজ। এসময় তারা সোহেল হাফিজসহ অন্যান্য সদস্যদের উপরে চড়াও হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে সোহেল হাফিজসহ প্রেসক্লাব সদস্যদের উদ্ধার করে। তিনি আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পরে ফেসবুকে বরগুনা প্রেসক্লাব নিয়ে সুকৌশলে নানা আপপ্রচার চালিয়ে স্থানীয় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চাক্রান্তকারীরা। খবর
এদিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমি সভাপতি ও সম্পাদকসহ স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ঝালকাঠি প্রেসক্লাব, কুয়াকাটা প্রেসক্লাব,পটুয়াখালী প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ।#
সাইফুল্লাহ নাসির ( বরগুনা)