গতরাতে আবিদ বাসায় ফিরেনি। সকালে বাসায় ফিরলে মিলি দরজা খুলে দিয়ে সোজা চলে গেল রান্নাঘরে তার নিজের কাজে। মিলি জানতেও চাইলো না সারারাত আবিদ কোথায় ছিল।। কারণ এই প্রশ্ন করে মিলি আর যেচে মার খেতে চায় না। তার চেয়ে নিজের কাজ করাই ভালো। অবশ্য কখনো যে জিজ্ঞেস করেনি তা নয়। প্রথম প্রথম যখন আবিদ দেরী করে বাসায় ফিরতো অথবা কোন কোন রাতে ফিরতোই না তখন মিলি জানতে চাইতো আবিদ কোথায় ছিল। আবিদের এক কথার উত্তর - আমি পুরুষ মানুষ , রাতে না ফিরলেও সমস্যা নেই।এসব বাজে প্রশ্ন আমাকে করবে না কখনো। অথচ একদিন মিলি তার একমাত্র ছেলে রোহান সহ রাত নয়টার সময় বাসায় এলে তাকে সহ্য করতে হয়েছিল জুতোর আঘাত। কতটা হৃদয়হীন আর বিবেকহীন এই আবিদ!
একজন উচ্চশিক্ষিত, বাইরে থেকে ভদ্র, পেশায় কলেজের শিক্ষক আবিদ সাহেব। মিলির মা আবিদকে খুব ভদ্র ছেলে হিসেবে জানতেন বলেই তার মেয়েকে ওর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মিলির মা তো আর আবিদের ভেতরের চরিত্রটা জানতেন না আগে। জানলে কি আর মিলির জীবনের এই সর্বনাশ হয়!বিয়ের কিছুদিন পরেই মিলি টের পেতে শুরু করেছিল আবিদের বদমেজাজ আর কুচরিত্র সম্পর্কে।কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতে চায়নি স্বামীর আচরণ সম্পর্কে। সবার কাছেই লুকিয়ে রেখেছিল সবকিছু। কিন্তু মিলির ছোট ভাই মনির যখন প্রায় সময় বোনের বাসায় থাকত তখন সে তার দুলাভাইয়ের অমানবিক আর হিংস্র আচরণ দেখেছে। মনির গিয়ে তার মাকে জানিয়েছে। এভাবে একটু আধটু জানাজানি হতে হতে আবিদের অত্যাচারের মাত্রা যখন সীমা ছাড়ালো তখন মিলি নিজেই সব কথা তার পরিবারকে জানিয়েছে। জানিয়েই বা কি লাভ হয়েছে?
আবিদের অত্যাচার যখন সীমা লংঘন করে তখন মিলি দুই পরিবারের অভিভাবক লেভেলের ২/৪ জনকে ডেকে বিচার বসায় । বিচারে অভিভাবক আবিদকে বলে দেয় এখন থেকে ওর গায়ে হাত তুলবে না , বাইরে রাত কাটাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি....... ।
আবিদ বিচার মানে কিন্তু তালগাছটা তার। কয়েকদিন ঠিকঠাক তারপর যেমন আবিদ আবার তেমন আচরণ শুরু করে দেয় । সে চায় মিলিকে তার অধীনস্থ করে রাখতে । মিলির অনেকবার ইচ্ছে হয় এই সংসার ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু যাবে কোথায়, করবে কি? মিলির বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, কিন্তু এখন রিটায়ার । পেনশনের টাকা দিয়ে নিজের সংসার চালান। তিন তিনটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ,ছেলেকে পড়াচ্ছেন ।মিলির বাবার অত টাকা নেই যে মিলি আর তার ছেলে রোহানের ভরণপোষণ চালাতে পারবেন। মিলি এইচএসসি পাস করেছিল। এইচএসসি পরীক্ষার কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়। মিলি ভেবেছিলো বিয়ের পর আরও পড়ালেখা করবে, চাকরি করবে। কিন্তু সেখানেও বাঁধা আসে আবিদের কাছ থেকে। আবিদ তাকে আর পড়ালেখা করতে দিল না। এখানেই থেমে থাকতে হল মিলিকে।
সে খুব ভালো সেলাইয়ের কাজ জানে। সে ভেবেছিল সেলাইয়ের কাজ করে অর্থ উপার্জন করবে, নিজে স্বাবলম্বী হবে । কিন্তু সেটাও আবিদের জন্য করতে পারে না । একটা টাচ মোবাইলের কত শখ মিলির। কিন্তু সেটাও কিনে দেয় না আবিদ । মিলির বোন তাকে টাচ মোবাইল কিনে দিলে এ নিয়েও কত কথা শুনতে হল ! এভাবে আর ভাল লাগে না সংসার করতে । মাঝে মাঝে যখন মিলি বলে, আমি রোহানকে নিয়ে তোমার সংসার ছেড়ে চলে যাব তখন আবিদের সহজ উত্তর- যেতে পারো যাও , তবে তুমি চলে গেলে তোমার আর রোহানের কোন খরচ আমি দিব না ।আর আমার সম্পত্তি থেকেও রোহানকে বঞ্চিত করব। একথা শুনার পর মিলির আর সাহস হয়না এই সংসার ছেড়ে যাবার ।হায়রে মিলি! তার সব পথ বন্ধ।
সে পারবে না অর্থ উপার্জন করে সাবলম্বী হতে, সে পারবে না ছেলেকে নিয়ে এই সংসার ছেড়ে চলে যেতে। তাহলে সে করবে কি?
এই মিলিদের কিছুই করার থাকে না । স্বামীর অমানবিক আচরণ আর হিংস্রতাকে জেনে বুঝে সহ্য করেই হয়ত কাটিয়ে দিতে হয় বাকি জীবনটা!
অনেক নারী সংগঠন , মানবাধিকার সংগঠন নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে।অথচ এরকম কত শত মিলি লুকিয়ে আছে গৃহের অভ্যন্তরে গৃহবন্দী! এই মিলিদের কেউ উদ্ধার করতে পারবে না । নিজেকেই নিজের উদ্ধারের পথ খুঁজতে হবে মিলিদের । মুক্ত করতে হবে নিজেকে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ হারুনুর রশিদ
বার্তা সম্পাদক : জাকির হোসেন শাকিল
আইন উপদেষ্টা : এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন
"এইচ বাংলা মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত -দেশ যুগান্তর"
অফিস : পুরানা পল্টন, ঢাকা- ১০০০।
ই-মেইল : news.deshjugantor@gmail.com
যোগাযোগ : 01763592492
Copyright © 2024 দেশ যুগান্তর. All rights reserved.