রায়পুর(লক্ষ্মীপুর)প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মচারী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নারীদেরকে খণ্ডকালীন কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে যৌন হয়রানি করা ও তথ্য গোপন করে ১২তম গ্রেডের কর্মচারী হয়ে কোন অফিস আদেশ ছাড়াই ৯ম তম গ্রেড রায়পুর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার পদে বসে ব্যাপক অনিয়ম করার অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে নোয়াখালী জেলা পরিসংখ্যান ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ জাকির হোসেনের সকল অপকর্মে সহায়ক থেকে ডিডি হারুন নিজেও যৌন হয়রানির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা এবং জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, জাকির হোসেন ৩য় শ্রেণির কর্মচারী। তার পদবী হচ্ছে পরিসংখ্যান তদন্তকারী (এসআই), কিন্তু সে সকল তথ্য গোপন করে অফিস আদেশ ছাড়াই রায়পুর উপজেলা পরিসংখ্যান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার চেয়ারে বসে শুমারী কাজসহ পরিসংখ্যান অফিসের বিভিন্ন সময়ে খণ্ডকালীন কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে খণ্ডকালীন কাজে কর্মরত সুন্দরী নারী ও প্রবাসীদের স্ত্রীদেরকে টার্গেট করে জাকির হোসেন গভীর রাতে হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ও মোবাইল নাম্বারসহ সকল সোস্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যারাই তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হবে তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে নানা অজুহাত দেখিয়ে কাজ থেকে ছাটাই করে দেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে বিচার দাবী করে গণমাধ্যমে অভিযোগ তুলেন। কুপ্রস্তাবের বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টসও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
যৌন হয়রানি ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়, জাকির হোসেন তথ্য গোপন করে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হয়েও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রায়পুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন, যা সরাসরি সরকারি বিধি লংঘন করা হয়েছে। খণ্ডকালীন শুমারীর কাজে অফিস আদেশ উপেক্ষা করে তার পছন্দের কয়েকজনকে জোনাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করিয়েছেন এবং শুমারীসহ একাধিক কাজ পছন্দের লোকদের দিয়ে করিয়েছেন। এতে করে উপজেলায় উপকারভোগীরা এসে ঠিক সময়ে কাজ করতে না পেরে অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন। যারা শুমারী কাজে অভিজ্ঞ তাদেরকে বাদ দিয়ে অদক্ষদের দিয়ে শুমারীর কাজ করিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।
”যৌন হয়রানি করা সহ অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে জাকির হোসেন সাংবাদিকদের হাতজোড় করে বলেন, আমি ভুল করেছি। ভবিষ্যতে আর কখনো এরকম অপরাধ করবোনা। আমার বিরুদ্ধে কোন নিউজ করবেন না, আমাকে সংশোধনের একবার সুযোগ দিন। ”
নোয়াখালী জেলা পরিসংখ্যান উপপরিচালক হারুন অর রশিদের উপর যৌন হয়রানির বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে পরে কথা বলব বলে মোবাইল কেটে দেন। এর পর উনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক গৌতম কৃষ্ণ পাল বলেন, ” আমি রায়পুরের অতিরিক্তের দায়িত্বে আছি। মাসে একবার রায়পুরে যাই। একই অফিসে দু’জন দায়িত্বে থাকতে পারেনা। জাকির হোসেনকে নাকি সাবেক উপপরিচালক হারুন অর রশিদ বদলি হয়ে যাওয়ার সময় দায়িত্ব পালন করতে বলছেন, কীভাবে বলছেন সেটা আমার জানা নেই। এবিষয়ে সাবেক ডিডি হারুনুুর রশিদ বলতে পারবেন। আর যৌন হয়রানির বিষয়টি আমি জানিনা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে জানান, তিনি বললে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। ”
বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান বলেন, একই অফিসে দু’জন দায়িত্বে থাকতে পারে না। জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিনা না দেখে বলতে পারবো । যৌন হয়রানির বিষয়টি দুঃখজনক লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”
প্রিজাইডিং অফিসার হওয়ার বিষয়ে রায়পুর নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা বলেন, কীভাবে সে প্রিজাইডিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তা আমি বলতে পারবো না। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যার বলতে পারবেন। আমি যতটুকু জানি ৩য় শ্রেণির কর্মচারী প্রিজাইডিংয়ের দায়িত্ব পাওয়ার কথা না। ”
” অভিযোগের বিষয়ে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান খান বলেন, ” আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব। উনি যে পদে আছেন এবং যে পদে কাজ করছেন সে ক্ষেত্রে যদি দাপ্তরিক কাজের মিল না থাকে তাহলে ওনার উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানাবো। আশা করি তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।এস.এম/দেশ যুগান্তর