নুরুল আমিন ভূঁইয়া দুলাল, নিজস্ব প্রতিবেধক :
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পে কোনও প্রকার কাজ না করেই চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রামগতি আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জন্য পুকুর খনন প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, প্রকল্প কমিটির সভাপতির যোগসাজসে গঠিত সিন্ডিকেট প্রকল্প সমূহের সমূদয় অর্থ লুটপাটের ঘটনায় আশ্রায়নবাসীসহ ভূক্তভোগীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এতে একদিকে পানীয় জলের সংকটে থাকা ভূক্তভোগীরা তাদের ব্যবহার্য পানীয়জলের চাহিদা মেটানোর জন্য পাশের ডোবানালার পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন।
অন্যদিকে সরকারের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসৃজন প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত করে লুটপাটের মহোৎসব চলছে। এতে আশ্রায়ণ বাসিন্দারাসহ সর্বস্তরের এলাকাবাসী অনতিবিলম্বে প্রকল্প সমূহের অর্থ লুটপাটের ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছেন।
সরেজমিনে রামগতি উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চররমিজ ইউনিয়নের (আজাদ মার্কেটের পূর্ব পাশের) আশ্রায়ন প্রকল্পের পুকুর খননে কর্মসূচির ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই বরাদ্দের বিপরীতে কোনও পুকুর খনন করা হয়নি। এসময় আশ্রায়ন বাসিন্দা রীতা রানী দাস, শাহিদা বেগম, বজল হক, আমেনা বেগম, জাফর আলম অভিযোগ করে জানান, তাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে পানীয়জলের সংকট দূর করতে একটি পুকুর খননের জন্য অতি দরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প হতে ৬ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগসাজসে কাজ না করে সমূদয় অর্থ লোপাট করে নিয়ে যায়।
এদিকে চর রমিজ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীরহাট পাকা রাস্তা থেকে উত্তর দিকে খাল পর্যন্ত বেলাল ড্রাইভার রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ৭ লাখ টাকা সম্পূর্ণ আত্মসাত করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কমিটি।
একই ইউনিয়নের চর মেহের আশ্রায়ন প্রকল্পের মাঠবিহীন এলাকার মাঠ ভরাটের নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ১৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নেয় সিন্ডিকেট। চর আবদুল্যাহ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের তেলিরচর মতিন মেম্বারের বাড়ির দক্ষিণ পাশে মাটির কিল্লা নির্মানের নামে শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু মেশিনে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাত করে। এনিয়ে স্থানীয় চরবাসী, শ্রমিক, দিনমজুর বাসিন্দাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। চরগাজী ইউনিয়নের শনি রোডের শাখা রোড সংস্কার শনি বাড়ি থেকে সুবল রোড পর্যন্ত সংস্কার প্রকল্পের ১২ লাখ টাকা নয়ছয় করে লুটে নেওয়া হয়।
বড়খেরি ইউনিয়নের তাল বেপারি রোড পূণ:নির্মান প্রকল্পের ৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, মোল্লা মসজিদ রোড সংস্কার প্রকল্পের সাড়ে ৭ লাখ টাকা বরাদ্দের ব্যাপক লুটপাট করা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র, মাঠ ভরাট, বাউন্ডারি ওয়ার নির্মান ও সংস্কারের নামে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নামে-বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে পকেট ভারি করার অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন জানান, আমি ঢাকায় আছি; আমাদের ইউনিয়নে যতটুকু কাজ হয়েছে ততটুকু বিল জমা দিয়েছি। তবে প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিষয়টি ভালো জানেন। কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাড়িতে আসলে জানাবেন বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
বড়খেরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাকছুদ মিজানের ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম অভিযোগ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের কাজ দেখে অর্থ ছাড় দিয়েছি। কাজ না করে থাকলে কোনও প্রকল্পের অর্থ ছাড় করা হয় না। এছাড়া প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ রেখে লাইন কেটে দেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তনু চৌধুরী বলেন, আমি হতদরিদ্র কর্মসূচীর মেক্সিমাম কার্যক্রম নিজে আমি পর্যবেক্ষণ করে ফেসবুকে ছবি দিয়েছি। যে গুলা দেখেছি কাজ হয় নাই; সেটার একটা বড় অংকের টাকা ফেরৎ পাঠাইয়া দিয়েছি।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা বলেন, মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, কোন প্রকল্পের কাজ হয় নাই ; আমাদের বললে আমরা করে দিবো।