নুরুল আমিন ভূঁইয়া দুলাল :
লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুনের মামলায় আটক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেওয়ান ফয়সাল ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতা হত্যায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ফয়সাল রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। গত সোমবার (১ মে) ঠাকুরগাঁও থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
মঙ্গলবার (২ মে) রাত ৯টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। এসময় জেলার এসপি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, পূর্ব-শত্রুতার জের ও এক ব্যক্তির ফোন কলে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুজনকে হত্যা করা হয়। মামলার ৩ নম্বর আসামি দেওয়ান ফয়সাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা এসপি জানান, জবানবন্দিতে দেওয়ান ফয়সাল বলেছেন, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে এক ব্যক্তির ফোন কল আসে। তাকে বলা হয়, নোমাকে মারতে হবে। এরপর তিনি মোটরসাইকেলে নাগেরহাটে যান। সেখান থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে তারা হেঁটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। জবানবন্দিতে তিনি বলেন দুজনকে শর্টগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এদিকে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেওয়ান ফয়সালের দেওয়া জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অনেকের নাম ও তথ্য এসেছে। তদন্তের স্বার্থে তা এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না বলেও জানান এসপি মাহফুজ্জামান।
যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় মঙ্গলবার বিকেলে ৭ আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে মশিউর রহমান নিশান ও রুবেল দেওয়ানের পাঁচদিন এবং মো. সবুজ, আজিজুল ইসলাম বাবলু ও নাজমুল হোসেন নাজিমের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায় লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল (চন্দ্রগঞ্জ) আদালতের বিচারক আনোয়ারুল কবীর এ আদেশ দেন। এছাড়া এ মামলায় মনির হোসেন রুবেল ও ইসমাইল হোসেন পাটওয়ারীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
হত্যার ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের রিমান্ডে নেওয়া আসামিদের মধ্যে মশিউর রহমান নিশান সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। অন্য আসামিরাও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
পুলিশ সূত্রে জানা যায় তারা সবাই এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আসামিদের মধ্যে সবুজ ও বাবলুকে এর আগে ২৮ এপ্রিল চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন বলেন, পাঁচ আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। আদালত দু জনের পাঁচদিন ও তিনজনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এরমধ্যে দুজনকে দ্বিতীয়বারের মতো রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের জন্য আমরা কাজ করছি।
জোড়া খুনের নোমান ও রাকিব হত্যাকাণ্ডে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদীকে দায়ী করছে নিহতদের পরিবার। তবে ঘটনার পর থেকে আবুল কাশেম জিহাদী আত্মগোপনে রয়েছেন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ।
উল্লেখ্য গত ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় সন্ত্রাসীরা তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মোবাইল নিয়ে যায়।
ওই সময় গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থল গিয়ে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক সেখানে তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন রাতে নিহত নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ আসামিকে গ্রেফতার করেছে।