জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় (পুকুর পাড়)সংলগ্ন ভূমিহীন আশ্রয়ণ প্রকল্পে মারামারি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে অর্থের বিনিময়ে মিলেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারী ঘর। এ ঘটনায় সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (২৬মে) সকালে বগারপাড় (পুকুর পাড়)সংলগ্ন ভূমিহীন আশ্রয়ণ প্রকল্পে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও ভূক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগার পাড় এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের থাকা আশ্রিতা জুরন আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম একটি রান্নাঘর উঠাতে যান আশ্রয়ণ প্রকল্পের পিছনে লোকমান আলীর ছেলে সুমন মিয়ার পৈত্রিক সম্পত্তি কবর স্থানের পার্শ্ব এবং পাশের বাড়ীতে লোকজনের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে পুর্বপরিকল্পিত ভাবে তাদের নির্দেশে শফিকুল ইসলাম ও তার লোকজনদেরকে নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ছাপরা ঘরের খুটি স্থাপন করে বলে সুমন মিয়ার অভিযোগ। ছাপরা ঘরের খুটি স্থাপন করে। এসময় জায়গার মালিক লোকমান হোসেনের ছেলে সুমন মিয়া এসে বাঁধা দিলে দুজনের মধ্যে বাকবিতন্ড শুরু হয়।
একপর্যায়ে ঝগড়াবিবাদের উপক্রম হলে শফিকুল ফোন দেয় তাদের কাছে, যারা তাঁর থেকে টাকা নিয়ে ঘর উঠানোর জন্য অনুমতি দিয়েছে। শফিকুল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছাত্তারকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে তাঁরা ঘটনাস্থলে চলে আসে এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইয়ে মিলে জায়গার মালিক সুমনকে মারধর শুরু করেন।পরে সুমনের চাচাত ভাই শাজাহান মিয়া (সাজু) এগিয়ে গেলে তাকেও মারপিট করে। এসময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক আশ্রিতা সুমনের আগের চাচাত ভাই আজাহার আলী (রাজা) ও তাঁর স্ত্রী শান্তি বেগম দু পক্ষকে মারামারি করতে নিষেধ করতে এলে তাদেরকেও বেদম মারপিট করে এবং শান্তি বেগমের গায়ের জামাকাপড় ছিঁড়ে বিবস্ত্র করে ফেলে বলে জানান নির্যাতিতার স্বামী আজাহার আলী। এসময় প্রতিবেশী মনির উদ্দিন (মনি) এ ঘটনায় রফাদফা (মিলমিশ) করতে আসলে তাকেও মারধর করে আহত করেন।
আহতরা হলেন- মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে আজাহার (রাজা) মিয়া (৩০) ও শাজাহান আলী(৩৫), লোকমানের ছেলে সুমন মিয়া(২৫) কালাঁচানের ছেলে ইমরান হোসেন(১৭), মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলীর ছেলে মনি (৩২), বেলাল হোসেন (৫০), শান্তি বেগম (২৫), মরর্জিনা আক্তার (৩০)।
এতে গুরুত্বর আহতদের সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।মারধরের ঘটনায় ২৭ মে রাতে শফিকুল ইসলামের স্ত্রী খালেদা বেগম বাদী হয়ে বেলাল হোসেন কে বিবাদী করে একটি অভিযোগ দেয় অপর পক্ষের বেলাল হোসেন বাদী হয়ে শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরিষাবাড়ী থানায় পৃথক পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে উক্ত ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আহত মনির উদ্দিন (মনি) জানান, এই ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বারেক এবং ছাত্তার অসহায় হতদরিদ্র মানুষগুলোর উপর সর্বত্রই জুলুম ও নির্যাতন করে আসছে। তাঁরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অসহায় দুঃস্থ গরীব মানুষদের সবসময় ভয়ভীতির মধ্যে রাখেন এবং কেউ কিছু বলতে গেলে এভাবেই তাদের উপর নির্যাতন চালায়। মনির উদ্দিন আরও জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই ঘরগুলো ১০-৪০ হাজার টাকা দিয়ে নিতে হয়েছে এই গরীব অসহায় মানুষগুলোর। যার বাস্তবতা মিলে শফিকুলের স্ত্রী খালেদার কথা অনুসারে। সে সংবাদ কর্মীদেরকে জানায় সভাপতি আব্দুল বারেক ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্তারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বাবদ ৪০ হাজার এবং আলাদা রান্নাঘর উঠানোর জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন তাঁরা।অপরদিকে আহত আজাহার আলী জানান, সে ঘর বাবদ ২৫ হাজার টাকা চুক্তি করে ২০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করেছে এবং বাকি ৫ হাজার টাকা দিতে পাচ্ছেনা বলে ঘর থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বারেক ও ছাত্তার। মূলত এর জের ধরেই আমার উপর তারা আক্রমণ করেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই আইনের কাছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশের জমির মালিক সুমন মিয়া জানান, সরকারী লোক এসে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা মাপা মাপি করে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু স্থানীয় নেতা বারেক ও ছাত্তার টাকার বিনিময়ে জোর করে আমার জমি পিছিয়ে আশ্রিতাদের রান্না ঘর তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে আমি বাধা দিলে আমার উপর আক্রমণ করেন।আশ্রিতাদের এ তথ্যমতে অনুসন্ধানে জানা যায়,সরিষাবাড়ী উপজেলা পোগলদিঘা ইউনিয়নে বগারপাড় এলাকায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ ক-শ্রেণী পরিবারের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমি-পাকা একক গৃহ নির্মাণ করে বিনামূল্যে উপহার দেওয়া কথা ছিল। কিন্তু বড়ই দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় বাস্তবে তা মেলেনি আশ্রিতাদের কাছ থেকে প্রতিটি ঘর বাবদ ১০-৪০ হাজার টাকা করে নিয়েছে এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছাত্তার।এ ব্যাপারে ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক ফারুক জানান, আব্দুল বারেক ও আব্দুল ছাত্তার এরা দুজনেই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্প নয়, তাঁরা বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও ভিজিডিসহ শিশু ভাতার কার্ডেও অসংখ্য লোকের কাছ থেকে ৮-১০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। তিনি আরও জানান,আমি একজন দলীয় কর্মী হিসেবে এ অপকর্মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এসব অসৎ, দুর্নীতিবাজ, জুলুমকারীদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে দল থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানাই ।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর রকিবুল হক জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে মারামারি’র কথা শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ছিলাম কিন্তু এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্তকরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দেশ যুগান্তর/এইতআর