জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারী সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ওয়াজেদা পারভীন। যোগদানের পর থেকেই দুর্নীতি অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বানিজ্য ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে আসছে তিনি ।২০১৬ সালে ১৬ জুলাই রুপালী ব্যাংক লিঃ আরামনগর বাজার শাখায় জামালপুর স্টেশন রোড ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি তার ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাব (নং-৫৯২৬০১০০০০৩১৯) খোলে ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের নিজ নামীয় ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাবে ব্যাংক রশিদের মাধ্যমে ৩৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ১৮১ টাকা আদায় করেন। বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৫-২০১৬,২০১৬-২০১৭ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ১২ টাকা ০১ পয়সার দুর্নীতির অডিট কমিটির প্রতিবেদনের রিপোর্ট অনুযাযী বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ১০দিনের সময় দিয়ে পর্যালোচনাসহ ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য ২০২১ সালের ৭ মার্চ ১ম নোটিশ জারী করেন। ১৮ মার্চ ওয়াজেদা পারভীন পর্যালোচনাসহ সহ ব্যাখ্যার জবাব না দিয়ে লিখিত ভাবে আরও ১০দিন সময়ের জন্য আবেদন করলে সভাপতি সময় বৃদ্ধির আবেদনটি মঞ্জুর করে ৩০ মার্চ এর মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। ৯ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির সভায় ওয়াজেদা পারভীনের জবাব সন্তোষ জনক ও বিধি সম্মত না হওয়ায় ১০ এপ্রিল পর্যালোচনাসহ ব্যাখ্যা প্রতিবেদন তৈরীর সুবিধার্থে প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি এবং ১১ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান সামাদকে প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে নোটিশ জারী করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়াও এন টি আর সি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) নিভা রাণী পাল এর নিকট থেকে এমপিও করা বাবদ ১লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা নেন ওয়াজেদা পারভীন। নিভা রাণী পাল এর নিকট টাকা না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ধার নিয়ে প্রধান শিক্ষককে দেন যা নিভা রাণী পাল প্রতি মাসে বেতন থেকে পরিশোধ করছেন বলে তুলে ধরে গত ২৫ এপ্রিল বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিভা রাণী পাল। ওয়াজেদা পারভীনের বিভিন্ন অনিয়মের কর্মকান্ড আলোচিত হলে ৩ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য শুনে এবং ওয়াজেদা পারভীনকে পুনরায় বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শাহজাদার নিকট সুপারিশ ও নির্দেশ প্রদান করেন। প্ররোচক মামা খালুদের ক্ষমতা দেখিয়ে রেজুলেশন করে ওয়াজেদা পারভীন প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২য় বার দায়িত্ব পালন করতে যোগদান করেন। পরে তিনি তার দুর্ণীতির টাকা থেকে ৩০ মে জনতা ব্যাংক সরিষাবাড়ী শাখায় বিদ্যালয়ের চলতি (নং-১০২১০০১৫৮৬) হিসাবে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জমা দেন ওয়াজেদা পারভীন । বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের মিটিং টি ১৩ মে হলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে ৩০ মে। তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পরেই বিভিন্ন শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার ও তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় কিছু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ধাম্বিকতা পোশন করেন। পুনরায় যোগদানের ২ মাস না পেরোতেই পুর্বের ন্যায় তার রূঢ় আচরণ সমেত অনিয়ম চালিয়ে গেলে ১২ আগস্ট বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্ণীতি অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করায় তার অপসারনের দাবীতে মানববন্ধন করেন শিক্ষক/শিক্ষিকা,কর্মচারীবৃন্ধ। তার বহুপন্থার অনিয়ম নিয়ে ২৫ আগস্ট “ রয়েছে নানা অনিয়ম বিদ্যালয়ের ৩৪ লক্ষ টাকা প্রধান শিক্ষকের সঞ্চয়ী হিসাবে জমা ” শিরোনামে দৈনিক আলোচিত সকাল অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করে । ২৬ আগস্ট দৈনিক আলোচিত জামালপুর পত্রিকায় সংবাদ পাঠিয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসকের মেইলে অভিযোগ প্রেরণ করেন মাসুুদুর রহমান । নানা জল্পনা কল্পনা শেষে ১৩ সেপ্টেম্বর সোমবার জামালপুর শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মনিরা মুস্তারী ইভা জামালপুর সদর এর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনকে আহবায়ক , জামালপুর জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মোঃ শফিকুল ইসলামকে সদস্য , জামালপুর জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুল আলমকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করে ১০ কর্ম দিবসের মধ্য সুস্পষ্ট মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অফিস আদেশ জারি করেন।
প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন কোন কথা বলতে রাজী না হওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কথা হলে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান শাহজাদার জানান, ১০ এপ্রিল দুর্নীতির দায়ে ওয়াজেদা পারভীনকে ছুটি দিয়েছিলাম। ১২ আগস্ট বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করায় তার অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক/শিক্ষিকা ও কর্মচারীবৃন্ধ।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, ইতোপূর্বে সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দুর্নীতির দায়ে ছুটি দিয়েছিল সেটা অনুলিপি পেয়েছিলাম। জামালপুর শিক্ষা অফিস থেকে গতকাল সোমবার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ,সেটারো অনুলিপি পেয়েছি।