অর্থনৈতিক উন্নতি, বিনিয়োগবান্ধব সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড, এবং শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত নীতির সার্বিক অগ্রগতির চিত্র দেখে মুগ্ধ হয়েছেন সান ফ্রান্সিসকোর রোড শো তে আমন্ত্রিত প্রবাসী ও আমেরিকান বিনিয়োগকারীরা। ২ আগস্ট বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তির রাজধানী খ্যাত ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আয়োজিত রোড শো’র শেষ পর্বে এই মুগ্ধতা প্রকাশ করেন অতিথিরা।খবর বাপসনিউজ।
‘দি রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব ট্রেড এবং ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’- শীর্ষক চতুর্থ পর্বের এ রোড শোতে সান ফ্রান্সিসকোর বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডাররা অংশগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরে এই রোড শো আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। যে কর্মসূচিতে অন্যতম সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশের টেক খ্যাত জায়ান্ট ওয়ালটন। রোড শো’তে নতুন এবং সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের সার্বিক চালচিত্র প্রবাসী বাংলাদেশি এবং আমেরিকান বিনিয়োগকারীদের মন জয় করেছে।
সান ফ্রান্সিসকোর হোটেল হায়াত রিজেন্সির রোড শো’তে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সিলিকন ভ্যালিতে গড়ে ওঠা উদ্যোক্তাদের সহায়তকারী প্রতিষ্ঠান দ্য ইন্ডাস ইন্টারপ্রেনিয়ানের (টিআইই) নির্বাহী পরিচালক বিজয় মেমন বলেন, ‘আমি মনে করি স্টার্টআপ নীতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য এ রোড শো দুর্দান্ত একটি সুযোগ তৈরি করেছে। সিলিকন ভ্যালিতে সারা বিশ্বের মেধাবিদের পুঁজি রয়েছে। এখানকার পুরো নেটওয়ার্কটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি বড় সুযোগ। এখানে আপনারা অসাধারণ পরামর্শদাতা ও বিনিয়োগকারীদের পাবেন। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের স্টার্টআপের জন্য এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন দারুণ কার্যকর একটি উপায়।’
সান ফ্রান্সিসকোকোতে অবস্থিত পেগাসাস টেক ভেঞ্চার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আনিস উজ্জামান বলেন, ‘আমরা শুধু আমেরিকাতেই বিনিয়োগ করি না। সারা বিশ্বে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। আমরা বিশ্বে ৪টি বিভক্ত জোনে বিনিয়োগ করে থাকি। এর মধ্যে প্রথম জোন আমেরিকা। দ্বিতীয় বড় জোন পূর্ব এশিয়া। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের মাধমে দক্ষিণ এশিয়াতে বিনিয়োগ শুরু করি। বাংলাদেশে ৬টির বেশি কোম্পানিতে অমাদের বিনিয়োগ রয়েছে। আমরা ১.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি।’
অনুষ্ঠানে সিলিকন ভ্যালির অ্যাঞ্জেল গ্রুপের প্রতিনিধি ক্যাথি ফার্মার বলেন, ‘রোড শো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে এখানে এসেছি। এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এ জন্য আমি আসলেই অনেক খুশি। আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।’
সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা ও কনফ্লিক্ট বকটের প্রতিষ্ঠাতা রুদমিলা বলেন, ‘আমি ইলেট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার। সিলিকন ভ্যালিতে আমার দুইটি স্টার্টআপ কোম্পানি রয়েছে। একটি এক্সআর কোম্পানি, অন্যটি রোবটিক অ্যান্ড এআই কোম্পানি। আমার কোম্পানির কার্যক্রম বাংলাদেশ ও সান ফ্র্যান্সিসকো তে পরিচালনা করা হয়। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কাজ করছি। এ রোড শো’তে এসে আমি অনেক কিছু জেনেছি এবং অনেক খুশি হয়েছি। বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন দেখে আমি মুগ্ধ।’
২ আগস্ট সান ফ্রান্সিসকোর হায়াত রিজেন্সি হোটেলে এই রোড শো’তে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সান ফ্রান্সিসকোর সান্তা ক্লারা শহরের মেয়র লিসা এম. গিলমোর। রোড শো’তে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং তথ্য ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করেন স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও টিনা জাবিন। পরবর্তীতে প্যানেলিস্টরা আলোচনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরের মধ্যে গত ২৬ জুলাই নিউ ইয়র্কে প্রথম পর্ব, ২৮ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিতীয় পর্ব, ৩০ জুলাই লস অ্যাঞ্জলসে তৃতীয় পর্ব এবং সান ফ্রান্সিসকোতে চতুর্থ ও শেষ পর্বের রোড শো সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে।