কুমিল্লার লাকসামে স্ত্রী প্রতারণা করে প্রবাসী স্বামীর ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। পাশাপাশি স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার উত্তরদা ইউপির রামারবাগ গ্রামে।
জানা গেছে, ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী আবু হানিফের স্ত্রী হোসনে আরা প্রতারণা করে ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। হানিফের বাবা-মাকে গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে হোসনে আরা ও তার স্বজনরা। স্ত্রীর এমন ঘটনা দেখে দিশেহারা স্বামী হানিফ। ভুক্তভোগী স্বামী আবু হানিফ দেশে না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তার বাবা-মা ও স্বজনরা।
এদিকে গৃহবধূ হোসনে আরা বাদী হয়ে গত ৯ আগস্ট স্বামী হানিফসহ ৬ জনকে আসামি করে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর পূর্বে উপজেলার উত্তরদা ইউপির রামারবাগ গ্রামের মৌলভী পেয়ার আহম্মদের ছেলে প্রবাসী আবু হানিফের সঙ্গে বীমা পলিসি করার সুবাদে পরিচয় হয় একই উপজেলার মিয়াজিপাড়ার মৃত হুমায়ন কবিরের মেয়ে হোসনে আরা বেগমের। পরিচয়ের সুবাদে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
গত ২০০৬ সালের ৭ নভেম্বর পরিবারের অজান্তে গোপনে বিয়ে করেন তারা। কিছুদিন সংসার করার পর স্ত্রীকে দেশে রেখে ফের দুবাই চলে যান প্রবাসী হানিফ। দীর্ঘদিন পর তাদের দাম্পত্য জীবনে হাছিব হোসেন নামে এক পুত্রসন্তান আসে। সন্তান জন্মের পর বছরখানেক তাদের সময় ভালোভাবেই চলছিল। এরপর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনমালিন্য শুরু হয়। স্ত্রী হোসনে আরা বিভিন্ন ছলচাতুরি শুরু করে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে। এমনকি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন হোসনে আরা। এমন ঘটনায় হানিফ ও হোসনে আরার মধ্যে কলহ সৃষ্টি হতে থাকে।
স্ত্রীর বেপরোয়া জীবনযাপনের ফলে হানিফ ২০১২ সালে স্ত্রী ও সন্তানকে দুবাই নিয়ে যান। প্রায় এক বছর প্রবাসে কাটলেও সুখ মেলেনি হানিফের; অবশেষে তার স্ত্রীকে দেশে পাঠিয়ে দেন। অপরদিকে বিভিন্ন অজুহাতে প্রবাসী স্বামী আবু হানিফের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় স্বর্ণালংকার, ফার্নিচার, মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় স্ত্রী হোসনে আরা।
একাধিক মোবাইল সিম ব্যবহার করে স্বামী হানিফের সঙ্গে নানাভাবে প্রতারণা করেছে তার স্ত্রী। স্বামী-স্ত্রী উভয় উভয়ের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ নিয়েও অন্তঃকলহ দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। অবশেষে স্বামীকে না জানিয়ে পৌর শহরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে তার স্ত্রী।
এর মধ্যে স্ত্রী হোসনে আরা বেগম স্বামীকে না জানিয়ে পরপর দুটি সন্তান নষ্ট করে। বর্তমানে তাদের হাসিব ও ফাতেমা নামে ২ সন্তান রয়েছে। তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ দরবারও হয়েছে। স্ত্রীকে সঠিক পথে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে স্বামী আবু হানিফ স্ত্রী হোসনে আরাকে সময়ের ব্যবধানে ১ তালাক করে ২ বার মৌখিক তালাক দিয়ে সতর্ক করলেও পরবর্তীতে চূড়ান্তভাবে তালাক দিতে বাধ্য হন।
স্বামী হানিফ প্রবাস থেকে তার প্রেরিত টাকার হিসাব চাওয়ায় এবং তালাকের নোটিশ পেয়ে হোসনে আরা ৯ আগস্ট স্বামীসহ ৬ জনকে আসামি করে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী হোসনে আরার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে গৃহবধূর স্বজনরা বলেছেন, হোসনে আরা হানিফের পরিবার থেকে বারবার নির্যাতিত হয়েছে; যা নিয়ে কয়েকটি দরবারও হয়েছে। এ কারণেই সে শহরে বাসা ভাড়া করে থাকে।
লাকসাম পৌর কাউন্সিলর আবদুল আলিম দিদার বলেন, তাদের এ ঘটনা নিয়ে সামাজিকভাবে সমাধান করার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। হানিফের স্ত্রী কুমিল্লা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি মামলা করেছে।
হানিফের বাবা মৌলভী পেয়ার আহম্মদ জানান, হানিফের স্ত্রী হোসনে আরা নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে আমার পুরো পরিবারটা সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে। এমনকি আমাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করেছে বলে শুনেছি; যা সত্য নয়। সে তার অপকর্ম ঢাকার জন্য এ মামলার পথ বেছে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার হোসেন জানান, ওদের পারিবারিক ঘটনা নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশ হয়েছে কিন্তু কোনো মীমাংসা হয়নি। তালাক কিংবা টাকা-পয়সা লেনদেন ও মামলা নিয়ে কিছুই জানি না এবং কোনো পক্ষই এখনও আমার কাছে আসেনি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন জানান, এ ব্যাপারে পুলিশ কিছুই জানে না। তবে এমন কোনো অভিযোগ নিয়ে এলে তদন্তসাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।