জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বৃষ্টির পানিতে ভাসছে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারের দেওয়া গৃহহীনদের আবাসন প্রকল্প। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রকল্পের ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে সরেজমিনে দেখা যায়। যাতায়াতের সড়ক না থাকায় এবং ডুবে যাওয়া ঘরের বাসিন্দাদের বেশিরভাগই ঘর ছাড়ছেন। আবাসন স্থান বিবেচনায় না নিয়ে এবং অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে গৃহহীনদের আবাসন প্রকল্প শেষ করায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ৮নং মহাদান ইউনিয়নের করগ্রাম এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। নলকূপ, টয়লেট ও রান্না ঘরের চুলাসহ প্রায় সব কিছুই ডুবে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন অধিকাংশ উপকারভোগী। বিলের মাঝখানে অপরিকল্পিত ভাবে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারের দেওয়া গৃহহীনদের আবাসন প্রকল্পকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। যাতায়াতের রাস্তা ছাড়া ছাইতানি বিলের মধ্যে নির্মাণ করা গৃহহীনদের আবাসন প্রকল্প বৃষ্টিতেই বেহাল অবস্থা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের চারদিকেই শুধু থৈ থৈ করছে পানি আর পানি। সেখানে থাকার মত আর কোন পরিবেশ নেই। তাই আশ্রিতরা বাধ্য হয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। দুঃখের বিষয় এই ছিন্নমূল আশ্রিতরা এখন কোথায় যাবেন সেটাও তাঁরা জানেন না। বন্যার পানিতে এ দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে বলে অসহায় মানুষগুলো অভিযোগ করেছে।
অপরদিকে, পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দি রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানাগেছে। উপকারভোগীরা জানান, চলতি বছরে জমির কাগজপত্রসহ ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হলেও বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, নিরাপত্তার অভাব ও যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা করা হয়নি। বর্ষা মৌসুমে ঘরের অর্ধেক পর্যন্ত পানি ওঠার আশংকায় আতঙ্কিত। ইতোমধ্যে অধিকাংশ ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় ঘরে এমন ফাটল দেখা দেয়ায় আশ্রিতরা যে কোন সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন বলে জানাগেছে। এই গরীব অসহায় মানুষগুলো একটু আশ্রয়ের আশায় প্রতিটি ঘর বাবদ ২০/৩০ হাজার টাকা এনজিও থেকে কিস্তি ও সুদের উপর যোগাড় করে রাজনৈতিক নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। আজ তাদের এ অসহায়ত্ব দেখার কেউ নেই বলে জানান আশ্রয়হারা আলো বেগম।
উল্লেখ্য, করগ্রাম আশ্রায়ণ প্রকল্পে ২১টি ঘর রয়েছে। যার প্রতিটি ঘরের ব্যয় বাবদ বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
আশ্রয়হারা আমেনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টেহা খরচ করে এ বিলের মধ্যে আমাগরে ঘর বানায় দিছে। কি লাভ হইছে ? সামান্য বৃষ্টির পানিতেই ঘর তলায় গেছে। এহন আমরা কই যামু। এর চাইতে তো আমরা পরের বাইত্তে ভালা ছিলাম।
এ বিষয়ে ৮নং মহাদান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জুয়েল বলেন, এ প্রকল্পটি করার সময় আমাকে অবগত করা হয়নি। যেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি করা হয়েছে সেখানে বছরের ৫/৬ মাসই জলাবদ্ধতা থাকে। ওটা মানুষের বসবাসের কোন উপযুক্ত জায়গা নয়।
সরিষাবাড়ীর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, তাদের এই জায়গাগুলো উচু করে দেওয়া হবে। যেন তাদের দুর্ভোগ কিছুটা কমে। তবে আপাতত তাদের পাশে স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্র আছে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিব।