আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১২ মার্চ) রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ দাবি জানান।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের সাহেব খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। চমৎকার ফিরোজা কালারের আসনে বসে তিনি প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। প্রতিদিন তিনি বিএনপিকে ধমক দেন, শিক্ষা দেন।
ফখরুল বলেন, আমি বলবো, আপনি আপনার ঘরকে আগে শিক্ষা দিন। আপনার ভাই কাদের মির্জা আপনার সম্পর্কে যেসব কথা বলেন, আপনাদের দলের নেতাদের সম্পর্কে বলেন, তারপরও তো আপনাদের থাকার কথা না। পদত্যাগ করা উচিত। আপনারা নিজেদের ঘরে মারামারি করেন, দলাদলি করে ইতোমধ্যে দুজনকে হত্যা করেছেন। একজন সাংবাদিক, একজন রাজনৈতিক কর্মী।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, কীভাবে সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশটাকে দলীয় সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা হয়েছে, তা তারা দেখেছেন। সরকার দেশকে শোষণ করছে। এই সরকার খুব সুকৌশলে রাষ্ট্রের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার বিভাগের এখন কোনো স্বাধীনতা নেই। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার কোনো ভিত্তি নেই। সেই মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোম্পানীগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশের বিরোধের জেরে গত দেড়-দুই মাস ধরে পুরো উপজেলায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশিরহাট বাজারে আবদুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এ সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি মারা যান। এরপর গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে দুই পক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আলাউদ্দিন নামের যুবলীগের এক কর্মী মারা যান। এ ছাড়া ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন।
সম্মেলনে সারাদেশ থেকে সংগঠনটির ৫৪৮ জন কাউন্সিলর অর্থাৎ ৭৯টি সাংগঠনিক জেলার ৩৯৫ জন এবং কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ১৫৩ জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানের বক্তব্যের পর সংগঠনের বিধান অনুযায়ী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে কৃষক দলের ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। বিকালে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বিএনপি।
কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে ও সদস্য এস কে সাদীর পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষক দলের সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজিমউদ্দিন, আফতাব উদ্দিন আহমেদ মণ্ডল, জামালউদ্দিন মিলন, এমএ হালিম, নাসির হায়দার, জিয়াউল হায়দার পলাশ, লুৎফুর রহমান, মাহমুদুল হক সানু, শরীফুল ইসলাম মোল্লা, মহসিন আহমেদ তুষার, আনোয়ারুল হক, এনায়েতুল্লাহ খোকন, রবিউল হাসান পলাশ, সালাহউদ্দিন খান মিলকী, নাসিরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, রফিকুল আলম রফিক, মাহবুবুর রহমান আউয়াল, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন তকদির হোসেন জসিম।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, আমিরুজ্জামান শিমুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম ও ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।