সড়ক যখন মরনের আরেক ফাঁদ হয়। তাহলে সড়কের কি আর প্রয়োজন? এমন প্রশ্ন এখন সড়কে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা বলেন, ‘মনে ওয় ই রাস্তার কোনো মাই-বাপ নাই, এর লাগি অউ রাস্তার অত বাদ অবস্থা। হারা সমস্ত রাস্তা জুরি খালি শুধু গাত আর গাত। দেখলে লাগে ইকানও পুসকুনি (পুকুর) করা অইছে।
বৃষ্টির পানিতে সড়কে কাঁদা জমে জনসাধারণসহ রোগী নিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পন্যবাহী ট্রাকগুলো গর্তের মধ্যে ধাবীয়ে পড়ে যানচলাচলে বাধাঁ সৃষ্টি করে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় জনসাধারণকে।
সিলেটর বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়ক এখন হয়েছে সত্যি সত্যি একটি মরণ ফাঁদ! এসড়কের করুন পরিনতিতে ভোগান্তিতে পড়ছেন দুই জেলার জনসাধারণ। জনবহুল প্রধান একটি সড়ক হচ্ছে সেটি। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থেকে সিলেট জেলা সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের সাথে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ওই সড়কটি।
ওই সড়ক দিয়ে সিলেট-রশিদপুর-বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুরসহ আশপাশ এলাকা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যানবাহনে চলাচল করেন এবং ব্যবসায়ী কাজে পন্যবাহী ট্রাক দ্বারা মালামাল বহন করে থাকেন।
সড়ক সংস্কার হচ্ছে প্রায় দেড় বছর ধরে। কিন্তু এতোদিন পরেও সড়কটি ‘যেলার অলা’ এমনটাই ক্ষুব্দ ভাষায় জানালেন ওই এলাকার চল্লিশোর্ধ এক বাস চালক। দুই উপজেলার জনসাধারণের চরম দূর্ভোগের নাম এই সড়কটি। আর যানবাহনের চালকদের কাছে এই সড়কটি এক আতঙ্কের নাম।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা গেছে, বিশমাস পূর্বে ২০২০সালের ডিসেম্বর মাসে বিশ্বনাথ সদর থেকে জগন্নাথপুর সীমানা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কোটি টাকায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও প্রসস্থকরণ কাজ শুরু করা হয়। গত ১০ মে এই কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাগিচা বাজার থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার সংস্কার কাজ এখনও বাকি রয়েছে।
তার মধ্যে ঠিকাদারকে ৬/৭ কোটি টাকা বিলও পরিশোধ করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রকৌশলী সুত্রে জানাগেছে। এছাড়াও কাজের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর জনবহুল এই সড়কে পুকুরের মতো গর্তের সৃষ্ঠি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের বাগিচা বাজার থেকে পিরের বাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে পুকুরের মতো গর্ত হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তার পরেও নিরুপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাটুজলে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীবাহী ও মালবাহীসহ সকল প্রকারের যানবাহন।
তিনমাস ধরে চলমান কাজ বন্ধ থাকায় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছেন জনসাধারণ। এছাড়াও বিশ্বনাথ সদর থেকে বাগিচা বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে প্রায় তিনমাস পূর্বে। মাত্র তিন মাসের ভেতরে এই সংস্কারকৃত অংশেও ভাঙন ধরে বড় বড় গর্তের সৃষ্ঠি হয়েছে। এতে নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই।
তবে এই সংস্কারকৃত অংশের কালিগঞ্জ বাজারের সেতুর পশ্চিম মুখ থেকে দতা নামক স্থান পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার কাজ করার বাকি রয়েছে। কিন্তু সংস্কারের বাকি অংশের কাজ না করে তিনটি মাস ধরে ঠিকাদার আছেন ঘুমে। আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছেন জনসাধারণ।
এব্যাপারে কথা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব ঠিকাদার সুহেল খান তিনমাস ধরে কাজ বন্ধের বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বর্তমানে শরিয়তপুর গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। আগামি সপ্তাহে কাজ ধরবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সাইদ সাংবাদিকদের বলেন, গত সোমবার সিলেটে মাসিক সভায় এবিষয়ে কথা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আবারও কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, বর্ষা মৌসুমের কারনে সড়কটির কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। আগামী অক্টোবরের দিকে কাজ শুরু হবে। আর আগামী সপ্তাহে বাজারের কিছু অংশে কাজ শুরু হচ্ছে।