বাজেট বরাদ্দ থাকার পরও কোন উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। সড়কের বেহাল দশা দেখে মনে হয় এ যেনো দেখার কেউ নেই, নেই কোন জনপ্রতিনিধি। দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার ও জনপ্রতিনিধিদের স্বদিচ্ছার অভাবে খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়ে গ্রামীণ সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যে কারণে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।
বলছিলাম, মাধবপুর উপজেলার ১১ নং বাঘাসুরা ইউনিয়নের সড়কের কথা। বর্তমানে সড়কটি দেখলে আঁতকে উঠবে যে কেউ! গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলাও। এসব প্রতি দিনকার চিত্র হলেও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কোন মাথাব্যথা নেই। ফলে , স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সংস্কারের বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই সড়কে। শাহজিবাজার-বাঘাসুরা ও ছাতিয়ান সড়কটি সংস্কারের জন্য ৮কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ হলেও আংশিক কাজ শুরু হলে অদৃশ্য কারণে থেমে আছে সড়কের কাজ। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে কোনো না কোনো দূর্ঘটনা। বিশেষ করে অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী ও হাসপাতালে রোগীদের আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ সড়কটি এখন নিজেই রোগী! বিকল্প সড়ক না থাকাতে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহনও।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শাহজিবাজার দরগা গেইট থেকে শুরু করে বাঘাসুরা হয়ে ছাতিয়ান পর্যন্ত সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ইট একটিও নেই জায়গা মতো। সব ইট আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদায় ডুবে। অথচ এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিকল্প সড়ক না থাকাতে ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। এই রাস্তা দিয়ে দৈনিক শত শত লোকজনদের যাতায়ত মাধ্যম হলেও বিশেষ করে মটর বাইক, ইজি বাইক. ভ্যান আসা যাওয়া কষ্ট সাধ্য তবু জনপ্রতিনিধির কোন উন্নয়নের নামে মিলছেনা সাড়া।
জানা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীদের বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্বেও সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকায় এলাকাবাসীর মাঝে হতাশ বিরাজ করছে। তাঁদের দাবি, সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ না নিয়ে কিভাবে সামনের নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চাইবেন জনপ্রতিনিধিরা!
টানা চার মেয়াদেরও বেশি সময় ধরে বাঘাসুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন সাহাব উদ্দীন আহমেদ জারু মিয়া। স্থানীয়দের দাবি, বিগত ২০ বছরেও এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে তেমন কোন অবদান রাখতে পারছেন না। এটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতা ও ‘অযোগ্যতা’ বলে দাবি করেছেন অনেকেই।
বাঘাসুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়নে গত কয়েক বছরে নতুন কোন সড়ক হয়নি বললেই চলে। সংস্কার না হওয়ায় অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। কিছু এলাকার বাসিন্দারা সড়ক সংস্কারের দাবিতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে ধর্না দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না বলে জানান।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন আহমেদ নিজের বাড়ির রাস্তা পাকা করলেও ইউনিয়নের কোন গ্রামের রাস্তা উন্নয়নের কাজ করেননি। দেখাযায়, রিয়াজনগর, মানিকপুর, হরিতলা, শাহপুর, তাজপুর, শিবজয়নগর, কালিকাপুর, রাধাপুর, লক্ষিপুর, গঙ্গানগর, উজ্জলপুর, কাহুড়া, ধিতপুরা, বাখরনগর, পুরাইকলা, সাবাসপুর, সুন্দরপুর, রতনপুর, রামচন্দ্রপুর, ভাটি সুন্দরপুর, হারুনপুর, সাতপাড়িয়া, নোয়াগাঁও, রূপনগর, দাসপাড়া, ও বাঘাসুরা গ্রামের ভিতরে বেশ কটি রাস্তার বেহাল দশা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব রাস্তায় পানি জমে থাকা থেকে শুরু করে খানাখন্দ বড় বড় গর্ত ও কাদা জমে থাকে মাসের পর মাস। এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ কোন সড়কের চাহিদা প্রকল্প নেয়া হয় না। যার ফলে বাঘাসুরা ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাটের করুন দশা কোনক্রমেই কাটছে না।
সড়কের এ বেহাল দশা নিয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা ডাঃ কামরুজ্জামান তালুকদার সজল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ভাই উপজেলার কতো রাস্তাই তো ঠিক হয়, কিন্তু আমাদের এ রাস্তাটা ঠিক হচ্ছে না কেন, বলতে পারি না? সড়কটির করুণ দশা। বলতে গেলে পুরো রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এই রাস্তাটিতে এখনও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া পড়েনি।’
মাধবপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জুলফিকার হক চৌধুরী জানান, শাহজিবাজার-বাঘাসুরা ও ছাতিয়ান সড়কটির জন্য ২০১৯ সালে কোটি টাকার একটি টেন্ডার হয়। ঐসময় ডলি কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পান। তারা আংশিক কাজ শুরু করার পর হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেন। গত এপ্রিল মাসে টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা উক্ত কাজটি বাতিল করেছি। পুনরায় সড়কটির জন্য ইস্টিমেট পাঠানো হয়েছে। নতুন করে টেন্ডার হলে সড়কটির কাজ আবার শুরু হবে।
স্থানীয়দের দাবী অতিদ্রুত রাস্তাটি মোরামত না করা হলে রাস্তাটি ভেঙ্গে যাবে এবং রাস্তা সংলগ্ন খালে ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী।