সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার ৫নং-ফতেহপুর ইউনিয়নের হরিপুর বাজার এলাকায় প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে রমরমা চোরাচালান লাইনম্যানের ব্যবসা। প্রতিদিন রাতে অবৈধ ভারতীয় নিষিদ্বকৃত মালামাল পরিবহণ হতে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এলাকার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী অসাধু চোরাকারবারি দলের সদস্য লাইনম্যানের নামে এই চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয় সচেতন মহল হামলা, মামলার ভয়ে কথা বলতে নারাজ। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সিলেট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট থানা পুলিশের নামে এই চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। চাঁদাবাজরা হলেন, একই ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের শীর্ষ চোরাকারবারি ও সিআইডি সদস্যের উপর হামলাকারী আসামি রুবেল এবং আবুল। তাদের গডফাদার হলেন কথিত চোরাকারবারি আজির রহমান ও রুবেল শরীফ ওরফে তেলচুরা। সরেজমিনে গিয়ে খুঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই চাঁদাবাজ চক্র স্থানীয় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। প্রত্যেকদিন রাতে জৈন্তা, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট থানার আওতাধীন থাকা সীমান্ত এলাকা হয়ে প্রতিনিয়ত ভারতীয় চোরাইপণ্য নিয়ে দৈনিক অন্তত সাড়ে ৩শ’ গাড়ি চোরাইদ্রব্য প্রকাশ্যে প্রবেশ করছে এই হরিপুর বাজারে। কিন্তু প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করছে। মালবাহি ড্রাম ট্রাক, কাভারভ্যাণ, ডিষ্ট্রিক ট্রাক, এইচ পিক-আপ, মাইক্রোবাস, কার, লেগুনা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা পরিবহণে এসব মালামাল যাতায়াতের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে। বিদেশী অস্ত্র, বিভিন্ন ধরণের মাদক সহ এমনকি রোগাক্রান্ত গরু-মহিষও এ থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। এছাড়া রয়েছে হরেক ধরনের বাজারজাত পণ্য। অতি নিম্নমানের এসকল পন্য হরিপুর বাজারের ভেতরে গরুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় এনে প্রত্যেক গাড়ি লোড-আনলোড করা হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশে। নিরাপদ রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হয় হরিপুর টু গাছবাড়ি কানাইঘাট রাস্তা ও সিলেট-তামাবিল হাইওয়ে রোডসহ সিলেট হাইওয়ে ঢাকা মহাসড়ক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হরিপুর বাজারের বেশ কয়েকজন দোকান ব্যবসায়ি জানিয়েছেন, প্রত্যেক বড় গাড়ি থেকে ৩ হাজার, মাঝাড়ি গাড়ি হতে ১ হাজার ও অন্যান্য ছোট গাড়ি থেকে ৫শ’ টাকা হারে চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্রটি। এর বড়ও একটি অংশ চলে যায় থানা পুলিশের টেবিলে। এছাড়া ভাগবাটোয়ারার আরেকটি অংশ পেয়ে থাকেন স্থানীয় উপজেলা পর্যায়ের কথিত কিছু হলুদ সংবাদকর্মীরা। অবশিষ্ট চাঁদা তারা তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে হজম করছে। যদিও ইতোমধ্যে এসব চোরাকারবারিদের নিত্যলীলা বিভিন্ন জাতীয়-স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, জাতীয় টিভি চ্যানেল, অনলাইন টিভি চ্যানেলসহ নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হলেও রহস্যজনক কারনে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষরা নিরব ভূমিকা পালন করছেন। বরাবরের মতো বক্তব্য নিতে গেলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এরকম সংবাদ প্রকাশের পর অনেক সাংবাদিক’কে কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন ধরণের হামলা-মামলায় জড়ানো হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন সংবাদকর্মী ও স্থানীয় উপজেলার অসহায় নিরীহ আমজনতারা। স্থানীয়রা মনে করেন, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষরা এগিয়ে আসলে এসব চোরাকারবারি ও চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব। পাশাপাশি তাদের দাবি প্রশাসনের সহযোগি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই প্রতিকারে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। অপরদিকে শীর্ষ চেরাকারবারি আবুল মিয়া বলেন তিনি কয়েকদিন থেকে সিলেটের বাহিরে ছিলেন শুক্রবার বাড়িতে এসে তিনি অসূস্থ হয়ে যান তাই তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননা। চেরাকারবারি রুবেল শরীফ ওরফে তেলচুরা বলেন তিনি কোন ব্যবসায়ী নয় এ ব্যাপারে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। শীর্ষ চোরাকারবারি রুবেল বলেন এ ধরণের কোন কাজে তিনি জড়িত নহে। একইভাবে আজির রহমানও বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন এনিয়ে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার থানা এলাকার কোন পুলিশ সদস্য এরকম কাজে জড়িত পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা হরিপুর বাজার এলাকায় চাঁদা উত্তোলন করছে তাদের খুজ নিয়ে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে । গোয়াইনঘাট থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, তার সীমান্ত থেকে কোন ধরনের চোরাইপণ্য পাচার হচ্ছেনা হয়ে থাকলেও তার পুলিশ সোচ্চার রয়েছে। কানাইঘাট থানার ওসি জানান, তার উপজেলায় চোরাইকৃত মালামালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরকম কাজে কাউকে ছাড় দেওয়ার সূযোগ নেই।##