করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে করে সরকারি বিধিনিষেধ আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানোয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা লকডাউন থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে এমনিতেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারি বিধিনিষেধ ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা আবারো আটকে গেলো। গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার অন্যতম শর্ত ছিলো করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে আসা। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে অবনতি হচ্ছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হবে। এখন সরকারি বিধিনিষেধ নতুন করে বাড়ায় বিষয়টি নতুন করে চিন্তা করতে হবে। এটা নিয়ে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও করোনা মোকাবিলায় সরকারের গঠিত কারিগরি কমিটির সঙ্গে কথা বলে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবো। ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি রাজধানীর দুটি আলাদা প্রোগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে আমরা ঝুঁকি নেবো না। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। এক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামা জরুরি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। এ অবস্থায় আগামী ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কোনো ঝুঁকি নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কি-না বা খোলা কতটা যৌক্তিক হবে, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে নানা বক্তব্য আসছে। এর আগে গত সপ্তাহে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না। জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেছেন, সরকারের ঘোষিত তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। শেষ প্রস্তুতি হিসেবে স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা পেলেই প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সরকারের নীতিনির্ধারকদের ব্যাপার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সব ধরনের প্রস্তুতিই আমাদের আছে।
গত ২৬ মে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান ছুটি ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আগামী ১৩ জুন থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে করোনার টিকার আওতায় আনার ওপর। এর আগে তিনি বলেন, ‘যদি ১৩ জুন স্কুল-কলেজগুলো খুলে দিতে পারি সেক্ষেত্রে ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি ব্যাচকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তারা হয়তো সপ্তাহের ছয়দিন ক্লাসে আসবে। যারা ২০২২ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তাদের ছুটির দিন ছাড়া বাকি দিনগুলোতে ক্লাসে নিয়ে আসা হবে। অন্যদের বিষয়ে সপ্তাহে হয়তো একদিন ক্লাসে আনা হবে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এটি চলছে। বন্ধ রাখা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে চাই। মাঝখানে করোনার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলাম। কিন্তু মাঝখানে হঠাৎ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। ঈদে বাড়ি যাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণের হার বেড়েছে। এসব বিষয়ও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে।’ সে সময় দীপুমনি আরও বলেন, ‘জীবন-জীবিকার জন্য সবকিছু চলছে। অর্থনীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন খোলা হচ্ছে না, সবাই এমন প্রশ্ন করছেন। আমাদের একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, শুধু শিক্ষার্থী নয় তাদের পরিবারও আছে। তাদের বাসায় অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ রয়েছেন, তাদের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে।’
দেশ যুগান্তর/আরএইচ